এনবি নিউজ : সব বিদেশি চ্যানেল বাদ দিয়ে শুধু দেশের ৩৪টি টিভি চ্যানেল প্রচার করে গ্রাহক ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন তারা।
তাদের আশঙ্কা এ অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে দর্শক অন্য মাধ্যমে চলে যাবে। এতে ব্যবসা হারিয়ে এ খাতে কর্মসংস্থানে ধস নামবে। এমন প্রেক্ষাপটে ‘ডিজিটাইজেশনের’ আগে পর্যন্ত এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে ‘ক্লিনফিড’ ব্যবস্থায় যেতে যন্ত্রাংশ সংগ্রহে আরও সময় চেয়েছেন তারা।
সরকারি নির্দেশনা মেনে শুক্রবার থেকে অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে- এমন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশের কেবল অপারেটররা। ক্লিনফিড মানে হল কোনো বিজ্ঞাপন থাকতে পারবে না৷
এ বিষয়ে কথা বলতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে কোয়াবের সাবেক সভাপতি এ বি এম সাইফুল হোসেন সোহেল বলেন, “দর্শকের বিনোদন চাহিদা পূরণ করার জন্য শুধু টিভি একমাত্র মাধ্যম না। এখন নেটফ্লিক্স, হইচই-এর মতো হাজারও প্ল্যাটফর্ম আছে, যার মাধ্যমে সম্প্রচার মাধ্যমের কনটেন্ট সরাসরি কাস্টমারের কাছে যাবে।
“কেবল অপারেটরদের পক্ষে একা ‘ক্লিনফিড’ বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর নয়। এটি তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন ব্রডকাস্টার ক্লিন করে সেই ফিড প্রবাহিত করবেন। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, একজন কেবল অপারেটর হিসেবে কখনও আমি গ্রাহকের কাছে ‘ক্লিনফিড কনটেন্ট’ দিতে পারব না।”
তিনি বলেন, “২০০৬ সালে যখন আইনটি হয়, তখন যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হত, তাহলে এখন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। সবগুলো বিদেশি চ্যানেল বাদ দিয়ে ৩৪টি বাংলা চ্যানেল দিয়ে গ্রাহকেরা আমাদের সঙ্গে থাকবে না। সেই গ্রাহক কোনো না কোনোভাবে বিনোদনের চাহিদা পূরণ করবেন। সেটা হোক ইউটিউবের মাধ্যমে, সেটা হোক ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিংবা অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে।
“যে কোনো মাধ্যমে গ্রাহক তার চাহিদা পূরণ করে নেবে। কেউ নেটফ্লিক্স দেখবে, কেউ জি-ফাইভ দেখবে। কনটেন্ট তার কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু কনটেন্টের যে মাধ্যম, যে মাধ্যম দিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছিল, সেই মাধ্যমকে যখন আমরা বাধাগ্রস্ত করছি, তখন গ্রাহক অন্য দিকে চলে যাবে। খুব বেশি সময়ও লাগবে না।“
এতে একজন কেবল অপারেটর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপারেটরটি তার গ্রাহক হারাবেন। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।
কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, “সরকার যে অর্ডার দিয়েছে, আমরা সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। তথ্য মন্ত্রণালয় আমাদের অভিভাবক। কেবল অপারেটরদের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন করছি, ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত অন্তত যেসব বিদেশি চ্যানেলগুলো বন্ধ আছে, সেই চ্যানেলগুলো যেন আমরা পুনরায় সচল করতে পারি, সে ব্যাপারে যেন তিনি একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।”
গ্রাহক হারানোর শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মানুষ কিন্তু বসে থাকবে না। সুইচ করবে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাবে। এই সুইচ করার সুযোগে কেবল টিভি নেটওয়ার্কের ব্যবসা যদি রাস্তায় বসে যায়, আমরা যদি এই সেক্টরে জড়িত মানুষকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিই, তাহলে এর দায়ভার কে নেবেন?”
সাবেক সভাপতি সাইফুল বলেন, “ক্লিনফিড আমরা অবশ্যই চাই। আমরা বিপক্ষে না। আমরা ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি, আইন অনুযায়ী আমাদের ক্লিনফিড সরবরাহ করতে হবে। ক্লিনফিড অনুষ্ঠান আমাদের কাছে সরবরাহ করা হোক। ডিস্ট্রিবিউটররা সে মোতাবেক ব্রডকাস্টারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমি নিজেও ব্রডকাস্টারের সঙ্গে আলাপ করেছি।“
বাংলাদেশের বাজার থেকে পাওয়া রাজস্বের প্রেক্ষাপটে ক্লিনফিড কনটেন্ট সরবরাহ করা তাদের পক্ষে বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যদি ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়ন হয়, তখন বাজারের আকার ৫০ গুণ বেশি বৃদ্ধি পাবে। তখন তারা ক্লিনফিড কনটেন্ট দেবে। তখন তারা (ব্রডকাস্টার) আমাদের কাছে সময় চেয়েছে।”
করোনাভাইরাসের কারণে ক্লিনফিড বাস্তবায়নে যন্ত্রাংশের স্বল্পতার বিষয়টি তুলে এনে সরকারের কাছে সময় চেয়েছেন তিনি।
“ক্লিন ফিড বাস্তবায়ন করতে গেলে ৫০০, সাড়ে ৫০০ কন্ট্রোল রুমের যে বক্স সরবরাহ করা আছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে হবে। স্যাটেলাইটের ফিড চেঞ্জ করতে হবে। এগুলো করতে সময় লাগবে। একটা যৌক্তিক সময় নির্ধারণের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যথায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি যদি চলমান থাকে, তাহলে হয়ত আমাদের পক্ষে আর ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।”