এনবি নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকে দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেই আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি পাওয়ার প্লান্ট আমরা করব। আমার ইচ্ছা পদ্মার ওপারেই অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলে করার। আমরা জায়গা খুঁজছি, আশা করি, এ ব্যাপারে খুব একটা অসুবিধা হবে না। এখানে যদি আরেকটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আমরা করতে পারি তাহলে বিদ্যুতের জন্য আমাদের আর অসুবিধা হবে না।’
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি (রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল) স্থাপনের কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর আর যেন কোনো শকুনির থাবা না পড়ে। বাংলাদেশের এই উন্নতি এবং অগ্রগতি যেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায়। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ আমরা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আর এই পাওয়ার প্লান্টটা হয়ে যাওয়ার পর আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি। যদিও দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত মাটিওয়ালা জায়গা পাওয়া খুবই কঠিন। বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন জায়গা আমরা সার্ভে করছি, আরেকটি পাওয়ার প্লান্ট আমরা করব। কোথায় ভালো জায়গা পাই এবং আমরা সেটা করতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি এই জন্য যে, এই বিদ্যুৎ সুবিধা যাতে মানুষ পায় এবং এটা যাতে অব্যাহত থাকে।’
পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বসানোর এ ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। ওই কেন্দ্রের যে যন্ত্রে পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার মূল কাঠামো হচ্ছে এই বিশেষ যন্ত্র, পারমাণবিক চুল্লি। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘হৃদপিণ্ড’ বলা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শওকত আকবর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের সময় আরএনপিপি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজরদারির মধ্য দিয়েই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প (আরএনপিপি) বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
সূত্র মতে, ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হবে। এর ফলে এই ইউনিটের রি-অ্যাক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুত ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। ২০২৩ সালে আমাদের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি আরও ত্বরান্বিত হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সময়ে আমরা এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম। আমরা বিশেষ করে রি-অ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল আমরা স্থাপন করলাম। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। পাশাপাশি, ২০৪১ সালের মধ্যে এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশকেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু, এখানেই থেমে গেলে চলবে না। ১৯৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলদেশ আমরা গড়ব।’
দেশ ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময়ে আগামী প্রজন্ম একটি সুন্দর, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবেই সেটা উদযাপন করবে। এই দেশকে আর যেন কোনোদিন পিছিয়ে পড়তে না হয় সেজন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেলটা প্লানও সরকার করে দিয়ে যাচ্ছে।’