এনবি নিউজ : ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের দ্রুততম ফিফটি। ব্যাট হাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহ। কে জানত, বড় ঝড়ের তখনও বাকি! ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বইয়ে দিলেন যেন টর্নেডো। খুব শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠের কথার তোড়ে তছনছ করে দিতে চাইলেন তাদের, প্রথম ম্যাচে হারার পর যারা দলকে ‘ছোট’ করেছেন। সেই তালিকায় সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সমর্থক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অধিনায়ক রাখলেন বিসিবি সভাপতিকে পর্যন্ত।
পাপুয়া নিউ গিনিকে ৮৪ রানে উড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। উদ্ভাসিত সেই জয়ের পর যখন সংবাদ সম্মেলনে আসেন মাহমুদউল্লাহ, তার মুখ তখন থমথমে। অমন চেহারার কারণ স্পষ্ট হলো একটু পরই। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের উত্থান-পতনের প্রশ্নে তার উত্তরে মিশে থাকল ক্ষোভের ছোঁয়া।
“আজকে ভালো খেলছি বলে সবার কাছে মনে হবে (দারুণ কিছু)… আবার এক ম্যাচে খারাপ করলে হয়তো খুব বেশি করে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, দল হিসেবে যেন ভালো পারফর্ম করতে পারি। এই ফরম্যাটে ওঠা-নামা (পারফরম্যান্সের) সবসময়ই থাকবে। ভালো-খারাপ দিন আসবে। দলের মধ্যে স্থিরতা থাকলেই আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
সেই সিদুঁরে মেঘ একটু পরই রূপ নিল ঘন কালো মেঘে। শোনা গেল গর্জন। সংবাদ সম্মেলনে ‘শক্ত’ হয়ে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে এলো তার ক্ষোভের কারণ।
“শক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। গত কয়েকদিনে… ঠিক আছে, আমরা মানুষ, আমরা ভুল করি। এ কারণে একেবারে ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। এটা আমাদের দেশ। আমরা যখন খেলি, পুরো দেশ একসঙ্গে খেলি। এটা মাথায় থাকে সবসময়। আমাদের চেয়ে ফিলিংস কারও বেশি নয়, আমার মনে হয়। সমালোচনা অবশ্যই হবে, খারাপ খেলেছি। তবে একেবারেই ছোট করে ফেলা ঠিক নয়। আমাদের সবার কাছেই খারাপ লেগেছে।”
এরপর অধিনায়কের কাছে প্রশ্ন, “একটু সুনির্দিষ্ট করে বলবেন, কোনটি খারাপ লেগেছে?”
অধিনায়কের উত্তর, “সব… সব, প্রতিটি কিছুই…।”
আবার প্রশ্ন, ‘সেটি কি সংবাদমাধ্যম নাকি অন্য দিক থেকে?’
অধিনায়কের স্পষ্ট জবাব, “সব দিক থেকে।”
সেই রেশ চলতে থাকল পরেও। এরকম একটি বৈশ্বিক আসরে, জৈব-সুরক্ষা বলয়ে থেকে, কোনো একটা অভিযানে নেমে, বাইরের আলোচনা-সমালোচনা দলের কাছে পৌঁছায় কিভাবে? স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পরদিন প্রকাশ্যে কড়া সমালোচনা করেন স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দলের হারের জন্য তিনি দায় দেন তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর মন্থর গতির ব্যাটিংকে। অভিভাবক সংস্থার প্রধানের এমন মন্তব্য কি দলকে স্পর্শ করেছে?
অধিনায়ক আড়াল করলেন না কিছুই।
“স্পর্শ সবই করে। আমরা মানুষ। আমাদেরও অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের বাবা-মায়েরাও বসে থাকে টিভির সামনে। বাচ্চারাও বসে থাকে। তারাও মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো এখন মানুষের হাতের নাগালে। সবার মোবাইলে আছে। সমালোচনা তো হবেই। আমরাও আশা করি, সমালোচনা হোক। খারাপ খেলেছি, অবশ্যই সমালোচনা হবে। কেন হবে না? কিন্তু সমালোচনার মাধ্যমে যদি কেউ কাউকে ছোট করে ফেলে, তখন সেটা খারাপ লাগে।’
“অনেক প্রশ্ন এসেছে। আমাদের ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইক রেট প্রসঙ্গে। আমাদের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট নিয়ে। আমরা তো চেষ্টা করেছি। চেষ্টার বাইরে তো আমাদের কাছে কিছু নেই। এরকম না যে আমরা চেষ্টা করিনি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু ফল আমাদের পক্ষে আনতে পারিনি।”
মাহমুদউল্লাহ আবারও বললেন, সমালোচনায় তাদের আপত্তি নেই। তবে আহত হয়েছেন তারা সমালোচনার ধরনে। মনে করিয়ে দিলেন, নিজেদের ত্যাগের কথাও।
“সমালোচনা হবেই। এটা কাম্য। কিন্তু সুস্থ সমালোচনা হলে সবার জন্য ভালো। আমরাও অনুভব করি। বাংলাদেশের জার্সিটা যখন আমরা গায়ে দেই তখন আমাদেরও ওই অনুভূতি হয় আমরা দেশের জন্য কতটুকু করি। সবারই ত্যাগ থাকে। কারও ব্যথা থাকে। কারও অনেক ইনজুরি থাকে। ওগুলো নিয়ে আমরা খেলি। দিনের পর দিন পেইন কিলার খেয়ে আমরা খেলি। পেছনের গল্পগুলো অনেকেই জানে না। এজন্য কমিটমেন্ট নিয়ে কখনও প্রশ্ন করা ঠিক নয়।”
প্রথম ম্যাচে দলের হারের পর এমন সমালোচনার ওই আবহের মধ্য থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্ব দিলেন তিনি দলের সবাইকে।
“আশা করি, এখন কিছুটা স্বস্তি পাব। সবচেয়ে বড় কথা, দলের ভেতরে যে উদগ্রীবতা (তাড়না), সেটা ইতিবাচক ছিল। এজন্য খেলোয়াড় এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। শুধু আমরাই নই। আমাদের স্টাফ, সোহেল ভাই (ম্যাসাজম্যান), রমজান (বল থ্রোয়ার), প্রত্যেককে কৃতিত্ব দিতে হবে। সবাই দলের অংশ। আশা করছি, ভালো কিছু হবে সামনে।’
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473