এনবি নিইজ : ডিজেলের দাম একসঙ্গে ১৫ টাকা বাড়ানো ঠিক হয়নি বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় জোটের এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিজেলের দাম এক সঙ্গে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি। যারা এটা করেছেন, তাদের উচিত ছিল ত্রি-পক্ষীয় একটা আলোচনা করে সবকিছু নির্ধারণ করা।’
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আগে বাস মালিক ও জনগণের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসা ঠিক হতো বলেও জানান তিনি। এ সময় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রাজস্ব কমিয়ে দিলেই হতো। ভারততো করেছে।’
বৈঠকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ডিজেলের দাম বাড়ানো এবং সেটাকে কেন্দ্র করে বাস-লঞ্চ-ট্রাকসহ পরিবহণ ভাড়া যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেটা অমানবিক বলেও মন্তব্য করেন জোট নেতারা। জোটের পক্ষ থেকে ভাড়া পুনঃনির্ধারণেরও আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান তারা। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া বৈঠকে সম-সাময়িক রাজনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।
করোনাকালে জোটের সাবেক মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু এবং সমন্বয়ক ও মুখপাত্র হিসেবে আমির হোসেন আমুর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল ১৪ দলের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো সরাসরি বৈঠক। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত সরাসরি এ বৈঠকে দলগুলোর নেতারা ১৪ দলীয় জোটের প্রাসঙ্গিতা এখনো বিদ্যমান জানিয়ে জোটকে আরো সক্রিয় ও কার্যকর করার কথাও বলেন।
এর আগে বৈঠকের শুরুতে মোহাম্মদ নাসিমসহ সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুবরণকারী রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরনে শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও এক মিনিট নীরবতা পালনও করা হয়।
আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন,‘১৪ দল মনে করে হঠাৎ করে ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি যুক্তিযুক্ত ও সঠিক নয়। সরকারের উচিৎ ছিল মালিক, জনগণের প্রতিনিধি ও সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাস ভাড়া বাড়ায় জনগণের যে দুর্ভোগ হয়েছে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পেক্ষাপটে যেভাবে বাসভাড়া বাড়ানো হলো, সেটাও অমানবিক ও অত্যন্ত বেশি। অধিকাংশ বাসই সিএনজি গ্যাসে চললেও সব ধরনের বাসের ভাড়ার বাড়ানো হয়েছে। হয় সব সিএনজিচালিত বাসকে ডিজেলে রূপান্ততর করা হোক, নয়তো জনগণের তীব্র দুর্ভোগ ও ভোগান্তি লাঘবে পরিবহন ভাড়া যুক্তিযুক্ত ও সহনীয় মাত্রায় পুনর্নিধারণ করা হোক।’
দ্রব্যমূল্য কমাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক করার আহ্বান জানিয়ে আমির হোসেন আমি বলেন, ‘আমাদের দেশে সরবরাহ ও উৎপাদনে কোন ঘাটতি নেই। তারপরও অহেতুকভাবে দফায় দফায় যে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সেইদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত ।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বসে তা সুরাহা করার আহ্বান জানান তিনি।
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ১৪ দলীয় জোট উদ্বিগ্ন বলে জানান মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যাতে সহিংসতা বন্ধ হয়। নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে যাতে জনগণ ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমরা বলছি না যে, নিরপেক্ষতা সরকারের পক্ষ থেকে নষ্ট হয়েছে। সহিংসতার কারণে মানুষ ভীত হবে। সহিংসতা বন্ধ করা হোক। যাতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ ও কঠোর হতে হবে।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সম্প্রদায়িকতার ঘটনায় সারাদেশে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, একটি সম্প্রদায়কে সামনে রেখে ঘটনাটি ঘটেছে। মূলত আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে যে অসাম্প্রদায়িকতা, সেই ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে নষ্ট করবার জন্য, দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এ কাজটি তারা করেছে। আমরা মনে করি সরকারকে তদন্ত স্বপেক্ষে এর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি জানান, ১৪ দলের পক্ষ থেকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সসম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান প্রমুখ।
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473