এনবি নিউজ : ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ অনলাইনে প্রক্রিয়াধীন আবেদনসহ মোট ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৪টি ই-নামজারি আবেদন পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯টি আবেদনের। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২২ লাখ ই-নামজারির আবেদনের মধ্যে ১৯ লাখের নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ২২ লাখ নামজারির আবেদন করা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ই-নামজারির ক্ষেত্রে ব্যক্তি আবেদনে বা এলটি নোটিশ প্রাপ্তির পর সাধারণ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৮ কার্য দিবস, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক হলে মহানগরীর জন্য ৯ কার্য দিবস ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২ কার্য দিবস এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলার বিনিয়োগবান্ধব শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সাত দিনের মধ্যে নামজারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও সাধারণ ক্ষেত্রে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জমির নামজারি সেবা পাচ্ছেন। ভূমি ব্যবস্থাপনায় এটাকে বিপ্লবই বলছে সবাই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্রয়, উত্তরাধিকার বা যেকোনও সূত্রে জমির মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারি বলা হয়। ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় সেটাই খতিয়ান।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নামজারির সিস্টেম একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল। এতদিন হয়রানি, দীর্ঘসূত্রিতা ও দুর্নীতি মাড়িয়ে করা হতো নামজারি। এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ই-নামজারিকে একটি বিপ্লবই বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহশীলদার) রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নামজারি নিয়ে সাধারণ মানুষের নানা মত ও অভিযোগে বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছিল। ই-নামজারি আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। এখন নেই কোনও অভিযোগ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির মালিক নিজেই ঘরে বসে আবেদন করছেন। সমাধানও পেয়ে যাচ্ছেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ই-নামজারিসহ অন্যান্য সব ভূমিসেবার ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর একটি অংশ। ই-নামজারি কার্যক্রম ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ৭টি উপজেলায় পাইলট আকারে শুরু হয়েছিল।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমিসেবা সহজ করতে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলমান উদ্যোগগুলো পর্যালোচনা করা হয়। ওই সভায় পাইলট আকারে গৃহীত ই-নামজারি সিস্টেমটি পর্যবেক্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ দ্রুত সারা দেশে ই-নামজারি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমি সংস্কার বোর্ড উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হার্ডওয়্যার সরবরাহসহ কানেক্টিভটি নিশ্চিত করে এবং এটুআই প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারকারী প্রশিক্ষণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।
পরে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সারাদেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয়। এখন তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া উপজেলা ভূমি ও সার্কেল অফিসে এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু রয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে নামজারির ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে অন্যান্য ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে ই-নামজারিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলি সুবিদখালী ইনিয়নের বাসিন্দা আইয়ুব আলী মৃধা। তিনি জানিয়েছেন, আগে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী জনগণকে ভূমি অফিসে গিয়ে মিউটেশনের আবেদন করতে হতো। এতে জনগণের সময়, অর্থ ও যাতায়াতে অনেক ব্যয় হতো। এখন land.gov.bd-এর মাধ্যমে সহজেই নামজারির জন্য যে কোনও নাগরিক আবেদন করতে পারছেন। এতে সাধারণ মানুষেরই সুবিধা হচ্ছে। কমছে হয়রানি ও ঘুষ।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নামজারি আরও সহজ করতে দলিল মূলে নামজারি ও অনলাইনে নামজারি ফি প্রদানের ব্যবস্থা স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্লোগান—‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’। এর ধারাবাহিকতায় নাগরিকরা তাদের দোরগোড়ায় কম সময়ে, কম খরছে ভূমিসেবা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, ই-নামজারির সিস্টেম আরও সহজ করার কাজ চলছে। তখন আর জমির মালিককে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট) কাটার টাকা জমা দিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে হবে না।
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে ২০২০ সালের ১৬ জুন জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ বিজয়ী উদ্যোগের নাম ঘোষণা করে। বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় ‘স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিকাশ’ (ডেভেলপপিং ট্রান্সপ্যারেন্ট এন্ড এ্যাকাউন্টেবল পাবলিক ইনস্টিটিউশনস) ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ ও জাতিসংঘ জনসেবা পুরস্কার ২০২০ অর্জন করে।
চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মদিনাত জুমেইরাহ সম্মেলন কেন্দ্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473