এজে তপন : হতাশার মধ্যে নিঃসঙ্গতায় ডুবে ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেও জীবিত থাকতে চেষ্টা চালিয়েও তাকে ওই বাড়ি থেকে নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার জামাতা চিত্রনায়ক রিয়াজ ।
আত্মহননকারী শ্বশুরের জন্য সবার দেয়া চেয়েছেন রিয়াজ। এই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন তিনি। আত্মহত্যার আগে মহসিন যা বলে গেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মহসিন খান (৫৮) ঢাকার ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তার স্ত্রী বিউটি খান (৫২) থাকেন ছেলে নিশানের (২০) সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়ে মুশকিফা তিনা স্বামী রিয়াজ ও সন্তানকে নিয়ে বনানী থাকেন।
বুধবার রাতে বাসায় ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন মহসিন। তার আগে নিজের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে নানা কষ্টের কথা বলেন তিনি।
পুলিশ পরে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যায়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার লাশ রিয়াজের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রিয়াজ থানায় যে অপমৃত্যুর মামলা করেছেন, সেখানে শ্বশুরকে নিয়ে লিখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মহসিন, তার একটি কিডনিও ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
রিয়াজ জানান, তার শাশুড়ি চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের কাছে যান। আর স্ত্রী তিনাকে নিয়ে তিনি ৮/১০ বছর ধরে বনানীতে থাকেন।
ধানমণ্ডির ফ্ল্যাটে মহসিন একা থাকলেও মাঝে মাঝে তারা (তিনা-রিয়াজ) গিয়ে দেখে আসতেন বলে জানান রিয়াজ। ফেইসবুকেও মেয়ে-জামাতা ও নাতির সঙ্গে মহসিনের ছবি দেখা গেছে।
রিয়াজ বলেছেন, সম্প্রতি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে শ্বশুরকে বনানীর বাসায় নিতে তিনি ও তিনা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শ্বশুর রাজি হননি।
১০/১২দিন আগে মানসিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরামর্শও মহসিনকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান রিয়াজ।
“তিনি তাতেও রাজি হননি। তিনি তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে কোথাও যেতে চাইতেন না।”
আবু মহসিন খান।
তার হতাশার কারণ কী- সে বিষয়ে রিয়াজ বলেছেন, তার শ্বশুর গার্মেন্টসের কাপড়ের ব্যবসা করতেন, কলাবাগানের পাগলা মাজারের কাছে তার ব্যবসায়িক অফিস ছিল। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ব্যবসায় মন্দা নেমে আসায় তার অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।
“ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পাওনা টাকা না পাওয়ায় সবসময় মানসিকভাবে চিন্তিত এবং হতাশাগ্রস্ত থাকতেন।”
মৃত্যুর আগে ফেইসবুক লাইভেও মহসিন বিভিন্নজনের কাছ থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা পাওনার কথা বলেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়েও মনোবেদনার কথা বলেন তিনি।
রিয়াজ জানান, ফেইসবুক লাইভে তার শ্বশুরের আত্মহত্যার ঘটনাটি জানার পর তিনি স্ত্রীকে নিয়ে রাত পৌনে ১০টায় ধানমণ্ডির বাসায় পৌঁছান। সেখানে দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখেন ডাইনিং টেবিলের দক্ষিণপাশে থাকা চেয়ারে বসা অবস্থায় মাথা ডানদিকে কাত হয়ে নিসাড় পড়ে আছেন মহসিন।
রিয়াজ দেখেন, তার শ্বশুরের ডান পাশে কান বরাবর রক্ত ঝরছে। চেয়ারের পাশে তার পিস্তল পড়ে আছে, পাশে দুটি গুলির খোসা। টেবিলের উপর অস্ত্রের লাইসেন্স এবং মোবাইল ফোন রাখা ছিল। মোবাইলে ফেইসবুক লাইভ তখনও চলছিল।
মহসিন খানের আত্মহত্যার ওই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর হাই কোর্ট ইন্টারনেট থেকে তা সরিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে শ্বশুরের লাশ গ্রহনের সময় রিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা আমার বাবার (শ্বশুর) জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে মাফ করেন।”
ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ধানমণ্ডির বাসায় নেওয়ার পর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাধ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয় মহসিনকে।
রিয়াজের দায়ের করা অপমৃত্যু মামলাটি ‘যথারীতি’ তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া।
তিনি জানান, “নিয়মানুযায়ী তদন্ত হবে। জব্দ করা অস্ত্রটি আদালতের অনুমতি নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, “আবু মহসিন খান আত্মহত্যার আগে যে সব ব্যাক্তির কাছে টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473