এনবি নিউজ : রাজধানীর সবুজবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শিশু সন্তানের গায়েও রক্ত মাখা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার বিকালে বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির চারতলা একটি ভবন থেকে মুক্তা নামে ২৮-২৯ বছর বয়সী ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান, সবুজবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আজগর আলী।
তিনি বলেন, “সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৯৯৯ থেকে (জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর) ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে মুক্তাকে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
“তার পাশে থাকা শিশু সন্তানকেও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।”
তবে শিশুটির গায়ে কোনো আঘাত ছিল না বলে জানান,পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার মো. আ. আহাদ।
তিনি বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে এসি ঠিক করতে এসে এক ব্যক্তি বাসায় ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। বাসার এসি খোলা অবস্থায় নামানো ছিল এবং জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
“কিছু খোয়া গেছে কি না বা হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ পরিদর্শক আজগর আলী জানান, চারতলা ভবনের দোতলায় দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন মুক্তা। তার স্বামী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি সেখানেই থাকেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ৯৯৯ এর মাধ্যমে এক নারীর হত্যার খবর পেয়ে রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকার বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির চারতলা ভবনের দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকে পুলিশও এমন দৃশ্য দেখতে পায়
নিহত তানিয়ার তিন বছর বয়সী মেয়ে ও ১০ মাসের ছেলেকেও পাওয়া যায় গায়ে রক্তমাখা অবস্থায়।
জানা গেছে, তিন বছরের রক্তমাখা শিশুটিই দরজা খোলা পেয়ে পাশের বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের খবর দেয় জানিয়ে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরাদুল ইসলাম বলেন, এরপর প্রতিবেশীরা ৯৯৯ এ ফোন করেন।
“আর দশ মাস বয়সী ছেলে সন্তানের অবস্থা দেখে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।"
ওসি বলেন, "আমরা ধারণা করছি, ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় তার তিন বছর বয়সী মেয়ে শিশুকে এবং ১০ মাস বয়সী সন্তানকে স্কচটেপ দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে রাখা হয়।
“হত্যাকারী পালিয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘরের গ্যাসের চুলার গ্যাস অন করে যায়, যাতে করে ঘরে আগুন লেগে যায়। নিহতের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়।"
এসি মেরামতের কথা বলে খুনীরা বাসায় ঢুকেছিলেন বলে ধারণা পুলিশের। তবে বাসা থেকে কী কী হারানো গিয়েছে এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে বিস্তারিত জানতে পারেনি তারা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার তলা ভবনের দোতলায় দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন এ গৃহবধু। তার স্বামী মাইদুল ইসলাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি করেন। তিনি সেখানেই থাকেন।
নিহতের স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার বরাত দিয়ে সবুজবাগ থানার ওসি বলেন, "ঘটনার কিছুক্ষণ আগেও হোয়াটসঅ্যাপে তানিয়া তার স্বামীর সাথে কথা বলছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন বাসায় এসি ঠিক করার জন্য লোক এসেছে। এরপর তিনি দরজা খুলে দেন।
ছেলে শিশুটি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায় আছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মোরাদুল।
তিনি বলেন, "নিহতের স্বামী ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত বাসার ব্যাপারে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি এসে মরদেহ শনাক্ত করলে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠাব।"ঘটনাস্থলে বাড়ির মালিকের ছেলে মাহিম আহমেদ জানান, গত দেড় বছর ধরে এ দম্পত্তি এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তানিয়ার স্বামী মাইদুল প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতেন। পাঁচ মাস আগে ফরিদপুরে বদলি হন। তখন থেকে তিনি সেখানে থাকেন।