এনবি নিউজ : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই, জাতীয় পার্টি কোনো জোটেই নেই। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির বি-টিম নয়। নির্বাচনের সময় কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, তবে বেশির ভাগ আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়াই করেছেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে হবে।
অপরদিকে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে মাঠে আছে। স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি প্রতাপের সঙ্গে নয় বছর দেশ পরিচালনা করেছে। দেশ পরিচালনায় সুশাসন ও উন্নয়নের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আছে জাতীয় পার্টির। দেশ ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় কখনোই আপস করছে না। জাতীয় পার্টি কারও দয়া বা ভিক্ষার রাজনীতি করে না। কারও করুণা নয়, সম্মানের জন্য রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভায় সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে আনুষ্ঠানিকভাবেই দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যারাই সরকার গঠন করে তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে দুর্নীতি ও লুটপাটে জড়িত। উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। পেশিশক্তি, কালোটাকা আর প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কলুষিত করছে নির্বাচন ব্যবস্থা।
একটি দলের প্রার্থীরাই নির্বাচনে জিতছে তাই রাজনীতির মাঠে অন্য দলগুলোর টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে রাজনীতি করছে। কোনো নির্যাতনে মাথা নত করবে না জাতীয় পার্টি।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বল হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আমাদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তার আগে আওয়ামী লীগ দুর্বল থাকলেও এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সুপার পাওয়ার হয়ে গেছে। বিএনপিও রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি আরও বেশি সময় পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে দুর্বল হয়েছে। তাই এখনই রাজনীতির মাঠে জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াবে।
জিএম কাদের বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পালিত কিছু বুদ্ধিজীবী জাতীয় পার্টি ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেননি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার বৈধভাবেই সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-এর হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তাতে দেশের মানুষ খুশি হয়েছিলেন। কারণ, দেশের মানুষ তখন একটি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছিলেন। ওই সময় শুধু বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণকে সমর্থন করেছিলেন। নয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে উন্নয়ন ও সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আইনের শাসন ও মানুষের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বৈধভাবেই রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তৎকালীন সরকার তিন জোটের রূপরেখার সব অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তাকে জেলখানায় বন্দি করা হয়। তখন পল্লীবন্ধুর নামে কোনো অভিযোগ ছিল না। পার্টির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের ওপর। কিন্তু তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সব দল রেডিও-টিভিতে বক্তৃতা দিয়েছে; কিন্তু জাতীয় পার্টিকে বঞ্চিত করা হয়। মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি, নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারেনি জাতীয় পার্টি। ঠুনকো অভিযোগ তুলে পল্লীবন্ধুকে নির্বাচন করতে দিতে চায়নি। কিন্তু গণমানুষের কঠোর আন্দোলনের মুখে পল্লীবন্ধুকে নির্বাচন করতে দিতে বাধ্য হয়েছিল। জেলখানায় বন্দি পল্লীবন্ধু পাঁচটি আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কখনোই জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হননি, তিনি মৃত্যুর পরেও গণমানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত। তাই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠে মাথা উঁচু করে কথা বলবে। কারণ, জাতীয় পার্টি ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতির নিয়ামক শক্তি হিসাবে ছিলেন।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশে মানুষের ভোটের অধিকার নেই। নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে, তাই ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। দুর্নীতি, দুঃশাসন আর লুটপাটের রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির সংগ্রাম চলবে। ’৯১ সালের পর থেকেই জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন চলছে কিন্তু কোনো নির্যাতন জাতীয় পার্টিকে সত্য ও ন্যায়ের আন্দোলন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সংসদে ও রাজপথে জাতীয় পার্টি দেশ ও মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির ইতিহাস সুশাসন ও আইনের শাসনের ইতিহাস। জাতীয় পার্টির রাজনীতি স্পষ্ট, জাতীয় পার্টি গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি করছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, দেশের মানুষ এখনও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়নের কথা স্মরণ করে। তারা আবারও জাতীয় পার্টির শাসনামলে ফিরে যেতে চায়। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সময় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, রাহাজানি, নৈরাজ্য, অর্থ পাচার, ব্যাংক ডাকাতি ছিল না। ছিল সুশাসন। মানুষ আবার সুশাসনের সোনালি দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায়। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এসময় জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, উপদেষ্টা ও মহিলা পার্টির সদস্য সচিব হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, মোস্তফা আল মাহমুদ, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সদস্য সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় সাবেক সৈনিক পার্টির সদস্য সচিব মো. নিজাম উদ্দিন সরকার, জাতীয় তরুণ পার্টির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন মৃধা, জাতীয় শ্রমিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্ত, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ সভাপতি মো. ইব্রাহিম খান জুয়েল, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির সভাপতি আজাহার ইসলাম সরকার, জাতীয় তাঁতী পার্টির সদস্য সচিব মো. আক্তার হোসেন, জাতীয় হকার্স পার্টির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন আনু, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পার্টির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মিন্টু, পল্লীবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব মো. মুজিবুর রহমান।
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473