এনবি নিউজ : পৌষের চার দিন চলে গেছে। কিন্তু এখনো শুরু হয়নি হাড় কাঁপানো শীত। হালকা শীতের এই পরিস্থিতি আরও দু-তিন দিন চলতে পারে।
এরপর কয়েকদিনের জন্য শীতের প্রকোপ বাড়তে পারে। কিন্তু তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নাও যেতে পারে। আর ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোতে সেই অর্থে শীত পড়বে না। তবে মধ্য পৌষ বা জানুয়ারির শুরুতে জেঁকে বসতে পারে শীত।
এখন শীতের প্রকোপ সেই অর্থে না থাকলেও আছে কুয়াশার দাপট। স্থানভেদে তা হালকা, মাঝারি থেকে ঘন।
মধ্যরাত থেকে সকালের সূর্য পুরোপুরি আলো না ছড়ানো পর্যন্ত থাকে কুয়াশার চাদর। মূলত কুয়াশার কারণ বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আসা দক্ষিণা আর আরব সাগর থেকে আসা উত্তর-পশ্চিমা বায়ু। এর সঙ্গে শহরাঞ্চলে শিল্প-যানবাহন আর ইটভাটার ধোঁয়া আর দূষিত বিভিন্ন উপাদান মিলে কুয়াশা তৈরি করে থাকে। কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, দেশে এখন কুয়াশার যে দাপট দেখা যাচ্ছে তার কারণ দক্ষিণা বায়ু। বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আসছে জলীয়বাষ্প। সারাদিন সূর্য আলো দেওয়ার পরে যখন তা অস্তমিত হয়, তারপর ধীরে ধীরে ধরণী শীতল হয়। স্থলভাগের এই শীতল বায়ুর সঙ্গে জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রণে কুয়াশা তৈরি হয়। এই সময়টা হয় মধ্যরাত বা এরপরে। কিন্তু ভোরে সূর্যের আগমনে তা কাটতে শুরু করে। সাধারণত কুয়াশা থাকলে শীতের দাপট কম থাকে।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, ভৌগোলিক কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে সূর্যের অবস্থান দূরে চলে যায়। এ সময়ে দিন ছোট আর রাত বড় থাকে। প্রথমত, দূরত্বের কারণে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত উত্তপ্ত হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, দিন ছোট হওয়ায় ধরণী উত্তপ্ত না হতেই রাত নেমে আসে। ফলে বাংলাদেশে এই সময়ে শীতের অনুভূতি থাকে। কিন্তু হিমালয়সহ সাইবেরিয়ান অঞ্চল থেকে যদি শীতল বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশে বেড়ে যায় তখন শীতের অনুভূতি বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ার সম্পর্কও আছে। ফলে সবমিলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়া না হওয়া নির্ভর করে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ঘন কুয়াশা পড়ার পরিস্থিতি বিরাজমান, শীত নয়।
বাংলাদেশে সাধারণত শীতের প্রকোপ শুরু হয় ও বেশি থাকে উত্তরাঞ্চলে। বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে। কিন্তু সর্বনিম্ন মাত্রার রেকর্ড বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রোববার যেখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে সোমবার এই রেকর্ড চলে আসে কুমিল্লায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার বিভাগ হিসাবে এদিন সবচেয়ে বেশি শীতের উপস্থিতি দেখা যায় বরিশালে। বিএমডি ওই বিভাগের চার স্টেশনের তাপমাত্রা পরিমাপ করে। দেখা গেছে বরিশালে ১৩ দশমিক ৪, পটুয়াখালীতে ১৪.৬, খেপুপাড়ায় ১৩.৮ আর ভোলায় ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। কিন্তু হিমালয় সংলগ্ন তেঁতুলিয়ায় এদিন তাপমাত্রা ছিল ১২. ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই বিভাগে রংপুরে ১৬ ডিগ্রি ছিল। বাকি এলাকায় ১৩.৫ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে ছিল। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে একটু নেমেছে। ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি। আর রোববার ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের মধ্যে ময়মনসিংহে এদিন তাপমাত্রা বেড়ে ১৪ হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীতে। ওই তিন বিভাগে রোববারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ১৮, ১৬ দশমিক ৯ এবং ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার ছিল ১৯, ১৮.৮ এবং ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রংপুর ও খুলনা শহরে এদিন তাপমাত্রা রোববারের তুলনায় কম ছিল। রোববার এই দুই বিভাগীয় শহরে তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৪ ও ১৪ দশমিক ৫ সেলসিয়াস, যা সোমবার ছিল ১৬ এবং ১৪.২ ডিগ্রি।
সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে তা মাঝারি আকারের এবং এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যত কমবে, শীতের তীব্রতা তত বেশি অনুভূত হবে।
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473