এনবি নিউজ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো মাতারবাড়ি বন্দরের নির্মাণ কাজ। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে বন্দরের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও বন্দরের আওতায় নির্মাণ কাজ এতোদিন শুরু হয়নি। গত সোমবার মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েইর সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রথম সভা শেষে নির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ।
বন্দর ভবনের সামনের খোলা মাঠের সবুজ চত্ত্বরে উন্মুক্ত পরিবেশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হলো অর্থনীতির চালিকা শক্তি। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বেগবান হচ্ছে অর্থনীতি। তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে বন্দরকেও সক্ষমতায় এগিয়ে যেতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর এখন সক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে মাতারবাড়ি বন্দর, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান। সেই প্রকল্পের অধীনে কয়লাবাহী জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে ১৮ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে বড় সাইজের জাহাজগুলো সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারবে। যেহেতু জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জেটি নির্মাণ হচ্ছে, সেই জেটিকে একটু বাড়িয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ সম্ভাব্যতা যাচাই হয় এবং তা ফলপ্রসূ হওয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এনবি নিউজকে বলেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূল ঘেঁষে বিশাল অর্থনীতির ক্ষেত্র গড়ে উঠছে, এতে আগামীতে ব্যাপক পণ্যের আদান প্রদান হবে। আর তা সামাল দিতে বন্দররের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ এনবি নিউজকে বলেন, আজ থেকে এই বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হলো। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে কাজ। জাপানের নিপ্পন কোয়েই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
এদিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের টিম লিডার মি. হোতানি এনবি নিউজকে বলেন, আমরা দুই ধাপে এর বাস্তবায়ন করবো। একটি হলো প্রকিউরমেন্ট এবং অপরটি হলো ডিজাইন। এছাড়া প্রকল্পকালীন সময়ে সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানের কাজটিও আমরা করবো। আর তা করতে গিয়ে প্রকল্পটি ভূমিকম্প সহনীয় এবং জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
অপরদিকে প্রকল্পের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম এনবি নিউজকে বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র তৈরি করার কাজটিও করবে। একইসাথে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরও তারা সুপারভিশন করবে এক বছর।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় ধরা হলেও প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। শুধু এই প্রকল্পের সাথে বিভিন্ন রোড নেটওয়ার্কের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হবে বলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প সম্পর্কে জাফর আলম এনবি নিউজকে বলেন, মাতারবাড়িতে ৮ থেকে ১০ হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। একইসাথে বছরে আট লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটির ইয়ার্ড প্রাথমিকভাবে নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রথমে একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানো হবে জেটি।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনে চট্টগ্রাম বন্দরের কত টাকা খরচ হবে? এনবি নিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর আলম বলেন, ২৩৪ কোটি টাকা খরচ হবে। আর এই টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ আকারে বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে।
প্রকল্পের মোট বাজেট প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জাফর আলম বলেন, ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার তথা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাকি টাকা জাইকা দিচ্ছে। অপরদিকে ভূমি অধিগ্রহণের ২৮৮ একর জায়গা ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473