সাগর হোসেন : দেশের ২০ জেলার ৭০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের’ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জন্মান্ধতা দূর করাসহ জনগণের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সব চেষ্টাই সরকার করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং মানুষ সেবা পাবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। কারণ বাংলাদেশকে যদি আমরা সুস্থভাবে গড়তে চাই, তাহলে আমাদের সুস্থ মানুষও দরকার।”
গোপালগঞ্জে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর পর চারটি জেলায় ২০টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’ এর উদ্বোধন করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এখন ধাপে ধাপে সেই সেবা দেশের প্রতিটি উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আসলে চক্ষু চিকিৎসার অনেক খরচ। সাধারণ মানুষ এই খরচটা দিতে পারে না। কিন্তু তারা এদেশের নাগরিক, তারা চিকিৎসা পাবেন না? আমি তো শুধু প্রধানমন্ত্রী না, আমি তো জাতির পিতার কন্যা। সেই হিসেবে আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব। এবং সেই দায়িত্বই আমরা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, অন্ধজনকে আলো দান- এর থেকে বড় কাজ আর কিছু হতে পারে না।
“কাজেই আমরা সেই চিন্তা থেকেই এ পদক্ষেপ নিয়েছি। এবং সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে এই সুযোগটা সৃষ্টি করা হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকে ঠিকমত চক্ষু সেবাটা নিতে পারে না। অনেক সময় বুঝতে পারে না কী হল, বা অন্ধত্ব তাদের জীবনটাকে একেবারে অর্থহীন করে দেয়। কিন্তু এই সেবার মধ্য দিয়ে আমি মনে করি যে তাদের এই চিকিৎসা সেবাটা পেলে তাদের জীবনটা অর্থবহ হবে, সুস্থ হতে পারবেন। সেজন্যই আজকে আমাদের এই উদ্যোগ।”
সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলায় চিকিৎসা সেবা পাওয়াও যে সহজ হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, সবাইকে কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা নিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হয় না। বরং নিজের জায়গায় বসে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে চিকিৎসাটা পেতে পারেন। অর্থাৎ টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাটা, সেটা কিন্তু করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আজকে চিকিৎসা পাওয়াটা অনেক সহজ হয়েছে।”
সরকার প্রধান বলেন, “আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। শিক্ষায়, দীক্ষায়, স্বাস্থ্যসেবায় মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে কেন্দ্র করে আমরা আরো আন্তরিকতার সঙ্গে এই ব্যবস্থাটা নিচ্ছি।”
জাতির পিতা দুঃখী মানুষের কষ্ট দূর করতে এই দেশ স্বাধীন করেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষে বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।
“এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতা যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটা ধাপ উপরে চলে এসেছি। বাংলাদেশ আর কারো কাছে ভিক্ষার জন্য হাত পাতবে না। বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে চলতে পারবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে আমরা চলতে পারব।”
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলা, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কর্মকর্তা এবং উপকারভোগীদের কথা শোনেন।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।