এনবি নিউজ : বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা-কল্পনা। অনেকেই বলছেন, এবার বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পেয়ে গেছে। মিঠুনই হবেন সেই মুখ।
তবে এই জল্পনা তেমন পাত্তা দেয়নি বিজেপি। কিন্তু ৭ মার্চ ব্রিগেডে মিঠুনের বিজেপিতে যোগদানের পর মঞ্চের পেছনে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একান্তে ১৫ মিনিট কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। সংবাদমাধ্যমে এ কথা প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। এবার যেন আর জল্পনা নয়। সবার মুখে এক কথা, মিঠুনকেই সামনে রেখে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে বিজেপি।
অবশ্য গতকাল শুক্রবার বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় শিলিগুড়িতে বিজেপির দলীয় দপ্তরে একটি বৈঠকে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিঠুন বলেছেন লড়বেন না। তবু আমরা মিঠুনের সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে প্রার্থী করার চেষ্টা করব।’
বিজয়বর্গীয়র কথায় স্পষ্ট, মিঠুন নির্বাচনে আসতে পারেন। যদিও ব্রিগেডে মোদির জনসভায় মিঠুন বলেছেন, তিনি বিজেপির জন্য জোরদার প্রচার চালাবেন রাজ্যজুড়ে। একেবারে জানপ্রাণ দিয়ে। তবে তিনি নির্বাচনে লড়তে চান না। তিনি এ কথাও বলেন, তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তা তিনি মেনে নেবেন। এতে করে পরোক্ষভাবে মিঠুন নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদে যোগ্য বেশ কিছু নেতা রয়েছেন। ভোটের পর আমরা বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে নেতা নির্বাচন করব। তিনিই হবেন বিজেপির দলীয় মুখ্যমন্ত্রী।’
এর আগে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল সাবেক ক্রিকেট তারকা সৌরভ গাঙ্গুলীকে নিয়ে। তখনো মানুষ ধরে নিয়েছিল, সত্যিই সৌরভ পা রাখছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। সৌরভের স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলীও সৌরভের জন্মদিনে বলেছিলেন, সৌরভ রাজনীতিতে যোগ দিলে সবার ওপরে থাকবেন। অনেকে ভেবেও নেন, সৌরভকেই বিজেপি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসাবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে সৌরভের সান্নিধ্যে চলে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে সৌরভ অসুস্থ হলে অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির বহু নেতা তাঁর আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠান। এরপর সৌরভ রাজনীতিতে আসবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ায় তাঁকে নিয়ে সেই জল্পনার অবসান ঘটেছে।
এদিকে আগামীকাল রোববার থেকে মিঠুন নামছেন বিজেপির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে। ওই দিন তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশবপুরে যাবেন বিজেপির হয়ে প্রথম নির্বাচনী প্রচারে। নির্বাচনী প্রচারে থাকবেন সেই লক্ষ্য নিয়ে এবার পুরো এপ্রিল মাস শুটিং ফাঁকা রেখেছেন তিনি।
অনেকের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করার মতো শক্তি রাখেন মিঠুন। তিনি দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলেন। প্রথমে অতি বামপন্থী সংগঠন, পরে সিপিএম, এরপর তৃণমূল কংগ্রেস ও সবশেষে বিজেপিতে এসেছেন। ছিলেন ২৫ বছর সর্বভারতীয় মজদুর ইউনিয়নের সভাপতিও। এ ছাড়া মিঠুনের রয়েছে একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, বিশ্বাসযোগ্যতা। ফলে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দাঁড় করাতে পারলে বিজেপি কার্যত লাভবানই হবে।
অন্যদিকে মিঠুনও বিজেপিতে যোগ দিয়ে আবেগাপ্লুত হন সেই ৭ মার্চ। ব্রিগেড সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আজ তাঁর কাছে একটা স্বপ্নের দিন। ছোটবেলা থেকে গরিবদের কল্যাণের জন্য ভাবতেন তিনি। দেশের জন্য কাজ করার কথা ভাবতেন। এবার সেই স্বপ্ন সফল হতে চলেছে।
মিঠুন মমতার আমন্ত্রণে রাজ্যসভার সদস্য বা সাংসদও হয়েছিলেন। তিনি তৃণমূলের সাংসদ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মিঠুনকে ওই সময় সারদা গোষ্ঠীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়। এরপর সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হলে তাতে নাম জড়ায় মিঠুনের। পরে অবশ্য তিনি সারদার কাছ থেকে নেওয়া পারিশ্রমিকের অর্থ ফিরিয়ে দেন সারদার তদন্তকারী সংস্থার হাতে। এরপর মিঠুন ছেড়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস। ছাড়েন রাজ্যসভার সাংসদ পদ। এমনকি রাজনীতিও।