এনবি নিউজ : করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে লেনদেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার। আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে শেয়ারবাজারে ধসে রূপ নেয়। বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে দরপতন হয় একের পর এক কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের। ফলে দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। অপরদিকে ক্রেতার সংকট থাকায় লেনদেনও কমেছে। ডিএসইতে বাজার মুলধন হারিয়েছেন ৬ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনের মধ্য দিয়ে। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৫০ পয়েন্টের উপরে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে হঠাৎ করে ডিএসইর ওয়েবসাইটে লাইভ আপডেট দেখানো বন্ধ হয়ে যায়। ৪৬ মিনিট বন্ধ থাকার পর দুপুর ১২টা থেকে আবার লাইভ আপডেট দেখাতে থাকে ডিএসই।
এর মধ্যেই বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দাম কমিয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে দেখতে দেখতে বড় ধস নামে শেয়ারবাজারে। এদিকে শেয়ারবাজারে ধস নামায় তাৎক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসি জানতে পারে- করোনার প্রকোপ বাড়ায় শেয়ারবাজার বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে বিএসইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, করোনার প্রকোপ বাড়লেও শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা নেই। ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা দেয়ায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি গুঞ্জন ছড়িয়েছেÑ করোনার প্রকোপ বাড়ায় শেয়াবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা কমিশনের নেই। ব্যাংক যদি খোলা থাকে করোনার প্রকোপ যতই বাড়–ক শেয়াবাজার খোলা থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন আশ্বাসের পর পতনের মাত্রা কিছুটা কমলেও ধসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজার। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮১ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৪৩৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। এদিকে প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। আগের দিনের তুলনায় এ সূচকটি ৩৭ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৯টির। আর ৯২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৯৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে লেনেদেন কমেছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির ৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, লাফার্জহোলসিম, জিবিবি পাওয়ার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং লুব রেফ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬০টির এবং ৪৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কামার কারণে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা, যা গতকাল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৭ কোটি টাকা।
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473