সাগর হোসেন : ছেলের বিয়ের আসরে হবু পুত্রবধূর হাতের জন্মদাগের ওপর চোখ আটকে গিয়েছিল চীনের এক নারীর। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীর মনে পড়ে যায় তাঁর হাতের মুঠো থেকে হারিয়ে যাওয়া একটা ছোট্ট হাত... ওই হাতেও যে ঠিক এমনই একটা দাগ ছিল! কালবিলম্ব না করে তিনি ছুটে যান মেয়েটির মা-বাবার কাছে। জানতে চান, মেয়েটি কি আদৌ তাঁদের নিজেদের সন্তান, না কি বিশ বছর আগে তাঁরা কোনো শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন? খবর সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার ও দ্য ডেইলি মেইলের।
গত ৩১ মার্চ চীনের চিয়াংসু প্রদেশের সুচোউ শহরের এ ঘটনা কোনো সিনেমার কাহিনির চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়। তবে এই ঘটনার বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে দুই দশক অতীতে। কোনো এক দুর্ঘটনায় নিজের তিন বছরের মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছিলেন ওই নারী। অনেক থানা-পুলিশ করেছেন। কিন্তু কোনো হদিশ মেলেনি সন্তানের।
এরপর কেটে গেছে কুড়ি বছর। সম্প্রতি ওই নারীর ছেলের বিয়ে ঠিক হয়। হবু পুত্রবধূর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আগেই, কিন্তু তখন হবু পুত্রবধূর হাতের সেই জন্মদাগ চোখে পড়েনি। বিয়ের আসরে যখন চোখে পড়ল, তখন আর এক মুহূর্তও দেরি করলেন না ওই নারী। হবু পুত্রবধূর মা-বাবাকে সোজা প্রশ্ন করেন— ‘আপনাদের মেয়েকে কি আপনারা দত্তক নিয়েছিলেন?’
মেয়ের হবু শাশুড়ির এমন প্রশ্ন শুনে হতচকিত হয়ে যান সেই দম্পতি। কুড়ি বছর আগে রাস্তায় থেকে একটি শিশুকে তুলে এনে নিজেদের মেয়ের মতো লালন-পালন করেছেন তাঁরা। কিন্তু, সে কথা তো কেউ জানে না। এমনকি, তাঁদের মেয়েও জানে না। মেয়েটির মা-বাবার উত্তর শুনে ওই নারী বুঝতে পারেন— হবু পুত্রবধূ আর কেউ নয়, অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁর নিজের মেয়ে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে অতিথিদের মধ্যে ততক্ষণে ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে। আর হারানো মাকে ফিরে পেয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে মেয়েটি।
কয়েক মিনিট পর কনের হুঁশ ফেরে। এ বিয়ে তো তা হলে অসম্ভব। বর যে তার আপন ভাই! চমক তখনও শেষ হয়নি। ওই নারী জানান, তাঁর ছেলেটি তাঁর গর্ভজাত সন্তান নয়! মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে এই ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। ছেলেটিও জানত না যে সে দত্তক সন্তান। যেহেতু দুজনের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই, তাই এই বিয়ে হতেও বাধা নেই।
এরপর চার হাত এক করে ওই নারী বললেন, ‘বিশ বছর ধরে যে দুঃস্বপ্নের ভার বয়ে চলেছি, আজ তা থেকে মুক্ত হলাম।’ আর, নববধূ সলাজ হেসে বললেন, ‘বিয়ে করে যতটা না, মাকে খুঁজে পেয়ে তারচেয়ে অনেক বেশি খুশি লাগছে।’