এক গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর উরুগুয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবার কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে হার মেনে নিতে হয় অস্কার তাবারেজের দলকে। ১৯৮৯ সালের পর কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি উরুগুয়ে। ৩২ বছর ধরে এ টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়বঞ্চিত রইল তারা।
১-০ গোলের এ জয়ে ২ ম্যাচে মোট ৪ পয়েন্ট নিয়ে 'এ' গ্রুপের শীর্ষে উঠল আর্জেন্টিনা। তাদের সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে চিলি।
ব্রাসিলিয়ায় মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে আজ আগের ম্যাচের একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনে দল মাঠে নামান আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি।
৪-৩-৩ ছকে গঞ্জোলো মন্তিয়েলের জায়গায় খেলান নাহুয়েল মলিনাকে, লুকাস মার্তিনেজের বদলে ক্রিস্টিয়ান রোমেরো এবং চোটে পড়া লিয়ান্দ্রো পারেদেসের জায়গায় গিদো রদ্রিগেজকে মাঠে নামান স্কালোনি।
ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই গোলের দেখা পেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্তে উইং ধরে আক্রমণ শুরু করা মেসি তাঁর চিরাচরিত বল পায়ে কাট ইন করে ঢুকে ভালো একটি শট নেন। পাসটি দেন রদ্রিগো ডি পল।
উরুগুয়ে গোলকিপার ফার্নান্দো মুসলেরা মেসির শট রুখে দিলেও ফিরতি বলটা দখলে রাখতে পারেননি মুসলেরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লাওতারো মার্তিনেজ।
৭ মিনিটের মাথায় মেসির এই শটের আগে আর্জেন্টিনার লেফটব্যাক মার্কোস আকুনার শটও রুখে দেন মুসলেরা। ৯ মিনিটের মাথায় নিকোলাস ওতামেন্দির হেডও রুখে দেন তিনি। এবারও পাসদাতা মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডি পল।
১০ মিনিটের মধ্যে ভালো শুরুর পর প্রথমার্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে দারুণ কিছু আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। আর এর নেপথ্যে ছিলেন মেসি।
বল পায়ে তাঁর দৌড় দেখে মনে হয়নি আগামী সপ্তাহেই পা রাখবেন ৩৪ বছর বয়সে। প্রান্ত বদল করার সঙ্গে মাঝ মাঠ থেকে তীব্রগতির দৌড়ে দু-একজন ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে উরুগুয়ের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেন মেসি।
কয়েকবারও তা করতে পেরেছেনও কিন্তু সতীর্থরা বিশেষ করে মার্তিনেজ বক্সের বাইরে ভালো খেললেও ফিনিশিংয়ে হতাশ করেন। ১৩ মিনিটে বাঁ প্রান্তে কর্নার থেকে বল নিয়ে চোখ ধাঁধানো ক্রসটি দেন মেসি। কোপা আমেরিকায় এ নিয়ে ১৩টি গোল বানালেন আর্জেন্টাইন তারকা।
আর্জেন্টিনা গোটা ম্যাচে মেসির ব্যক্তিগত ঝলক ছাড়া সৌন্দর্য ছড়াতে না পারলেও ঠান্ডা মাথার খেলা উপহার দিয়েছে। বিশেষ করে ডিফেন্ডাররা, যেখানে ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর নাম আলাদা করে বলতেই হয়।
উরুগুয়ের দুই ফরোয়ার্ড এডিনসন কাভানি ও লুইস সুয়ারেজকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেননি রোমেরো। বাতাসে ভেসে আসা দুরপাল্লার পাসগুলো সামলেছেন দারুণ দক্ষতায়। তবে ২৬ মিনিটে পেনাল্টির দাবি করেও পাননি কাভানি। আর্জেন্টিনার বক্সে বল নিয়ে ঢুকে পড়া কাভানিকে ফেলে দেন রদ্রিগেজ। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিও (ভিএআর) পেনাল্টির বিপক্ষে রায় দেয়।
উরুগুয়ে ৫৫ শতাংশ সময় বল দখলে রাখলেও আর্জেন্টিনার গোলপোস্টে কোনো শট নিতে পারেনি। অন্যদিকে নিকোলাস গঞ্জালেস, মেসি ও মার্তিনেজদের আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগ ভীতির সঞ্চার করেছে প্রথমার্ধে।
এমনকি আকুনা, রদ্রিগেজরাও শট নিয়েছেন ওপরে উঠে এসেছে। আর্জেন্টিনার নেওয়া ৯টি শটের মধ্যে ৬টি ছিল গোলপোস্টে। উরুগুয়ের রক্ষণে ড্রিবলিং করে ভালোই ঢুকেছেন মেসি। কিন্তু ডিয়েগো গোডিন-হিমিনেজরা তাঁকে ঘিরে ধরায় শট নেওয়ার ভালো জায়গা পাননি।
৭০ মিনিটে গঞ্জালেসকে তুলে আনহেল ডি মারিয়া এবং ৫২ মিনিটে জিওভান্নি লো চেলসোকে তুলে এজেকুয়েল পালাসিওসকে মাঠে নামান স্কালোনি। লো চেলসোর বদলির সময় মার্তিনেজকেও তুলে নিয়ে কোরেয়াকে নামান আর্জেন্টিনার এ কোচ।
২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারের পর এ নিয়ে ১৫ ম্যাচ অপরাজিত রইল আর্জেন্টিনা। সোমবার প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হবে স্কালোনির দল। উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ চিলি।