এর আগে ১৬ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের টিকা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার জন্য সরকার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থন ও অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের কারখানায় টিকা উৎপাদনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও জানিয়েছেন। গতকাল তিনি মানিকগঞ্জে নিজের বাড়িতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকটি সভাও করেছি। সেখানে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাঁদের প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করতে বলেছি। গোপালগঞ্জে যে ওষুধ কারখানা আছে, সেখানে বা তার পাশে আমরা ভ্যাকসিন তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সেটার জন্য একটু সময় লাগবে, তবে এখনই কাজ শুরু হয়ে গেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যৌথভাবে টিকা তৈরি করতে চীন ও রাশিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারি অথবা বেসরকারি কোম্পানি যাদের টিকা তৈরির সক্ষমতা আছে তাদের অনুমোদন দেওয়া হবে।
বিদেশ থেকে টিকা কেনা এবং টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে পর্যাপ্ত টিকা পাওয়া অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এনবি নিউজকে বলেন, টিকার নিরাপত্তা এখন খাদ্যনিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। সরকারই তা পারবে। তবে সরকারকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।
ইডিসিএলের সক্ষমতা
বছরে প্রায় সাত শ কোটি টাকার ওষুধ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে ইডিসিএল। ঢাকা, বগুড়া ও গোপালগঞ্জ কারখানায় এসব ওষুধ তৈরি হয়। গোপালগঞ্জের কারখানাটি নতুন। গত বছর থেকে সেখানে ওষুধ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
গতকাল ইডিসিএলের ঢাকা ও গোপালগঞ্জের দুজন কর্মকর্তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ইডিসিএলের
গোপালগঞ্জ কারখানায় এখন অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রন বড়ি, আইভি ফ্লুইড এবং কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী তৈরি হয়। টিকা তৈরির জন্য এখানে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তবে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। টিকা তৈরির আনুষঙ্গিক কিছু সহায়তা এখান থেকে দেওয়া যাবে।
ইডিসিএলের কর্মকর্তারা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার দুটি বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে। বিদেশ থেকে টিকার উপাদান এনে ইডিসিএলের কারখানায় তা বোতলজাত করে বাজারে ছাড়া। এতে সময় লাগবে প্রায় এক বছর। আর টিকা উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা। এতে সময় লাগবে কমপক্ষে তিন বছর। দুটি ক্ষেত্রেই বিদেশি সহায়তার দরকার হবে।
প্রধানমন্ত্রীর টিকা ইনস্টিটিউট তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এনবি নিউজকে বলেন, ‘ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে টিকা
নিয়ে গবেষণা ও টিকা উৎপাদন—দুটোই সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দেশে টিকাবিজ্ঞানী তৈরি হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টিকার মান যাচাই করা সম্ভব হবে।’