এনবি নিউজ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘কঠোর’ লকডাউনের প্রথম তিন দিনে ঢাকায় রাস্তায় বেরিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ; তারপরও চতুর্থ দিনে রাজধানীতে চলাচল আরও বেড়েছে।
রোববার সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক মোটামুটি ফাঁকা থাকলেও অলিগলি ও কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় আগের তিন দিনের চেয়ে বেশি। কারো কারো মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে।
কাঁচাবাজার, মাছের দোকানে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দরদাম চলছে; গলির ভেতরে খাবার হোটেলে নাস্তা কেনার জন্য জটলা করছেন অনেকে।
ছবি তুলতে দেখলে কেউ কেউ একটু সতর্ক হন, থুতনি থেকে মাস্ক নাকে-মুখে উঠে। প্রশ্ন করলে কেউ আমতা আমতা করেন, কেউবা প্রকাশ করেন বিরক্তি।
তবে প্রধান সড়কগুলোতে গত দুদিনের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি তৎপর দেখা গেছে রোববার সকালে।
আজিমপুর চৌরাস্তায় আগের তিন দিনের তুলনায় অনেক বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া কাউকেই তারা রাস্তা দিয়ে যেতে দিচ্ছেন না।পলাশী মোড়ে তল্লাশি চৌকি না থাকলেও রয়েছে পুলিশের তৎপরতা। তেজগাঁও এলাকায় ভোর থেকেই সেনা সদস্যরা তৎপর ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক ধরে টহলও দিতে দেখা গেছে তাদের। শাহবাগ এলাকায় দেখা গেছে র্যাব ও বিজিবির টহল।
আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের সামনের সড়কে দেখা গেল এক মাছের দোকানে ১৫ জনের মত মানুষের ভিড়। একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনের শরীর লেগে আছে। কাছেই দুটো খাবার হোটেলে ভিড় করে নাস্তা কিনছে মানুষ।
পল্টন, মালিবাগ, আজিমপুর, মিরপুর, ধানমণ্ডি, শাহবাগসহ প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যাও গত দুদিনের তুলনায় বেশি।
লকডাউনের মধ্যে সব সড়কেই এখন রিকশা চলছে। জরুরি পরিষেবা ও পণ্যের গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক বাহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রিকশা চলতে বাধা নেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এক সপ্তাহের এই ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়। তবে প্রয়োজনে এর মেয়াদ বাড়তে পারে বলে ইংগিত এসেছে সরকারের কর্তব্যক্তিদের কথায়।
আজিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ভোর থেকে আমরা ডিউটি দিচ্ছি। রাস্তায় যারাই বেরিয়েছেন, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিনা কারণে বের হলে গ্রেপ্তার হতে হবে।”নিউ মার্কেট থানার এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, “সড়কে মোটরসাইকেলে দুজন থাকলে আমরা মামলা দিচ্ছি। রিকশায় দুজন চলাচল নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়েও জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তারা কী প্রয়োজনে লকডাউনের মধ্যে বাইরে বেরিয়েছেন।”
রামপুরা-মালিবাগ এলাকার প্রধান সড়কের পাশের দোকানপাটগুলো বন্ধ থাকলেও সকালে গলির ভেতরে সেলুন, মোবাইল এক্সেসরিজ, চায়ের দোকানসহ সব ধরনের দোকানই খোলা দেখা যায়।
শনিবার রামপুরা কাঁচা বাজারের পাশে সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তল্লাশি চৌকি ছিল, তবে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত তা দেখা যায়নি।
ছোটখাটো দুর্বল শরীরের মধ্য বয়সী এক নারীকে মৎস্য ভবনের সামনের সড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় সকালে। কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে বললেন, কাকরাইলে এক বাসায় কাজ করেন, সেখানেই যাচ্ছেন।
লকডাউনে বের হয়েছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মালিকতো ছুটি দেয়নি। দিলে তো চাঁনখারপুল থেকে আসতে হত না।”
বৃষ্টির কারণে মিরপুরের ১১, ১২ ও কালশী এলাকার সড়কগুলোতে চলাচল কম ছিল সকালে। তবে মুদি দোকান ও কাঁচাবাজারে মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। বাজার করতে বের হয়েছেন তাদের অনেকে।
মিরপুরের মুসলিম বাজারের সবজি বিক্রেতা ডালিম বলেন, “সকালে কিছু বিক্রি হইছে। এখন বৃষ্টি বাড়ছে, তাই কাস্টমার কম। যাদের দরকার, তারা তো কিনবই।"
পূরবী বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন মহসিন হোসেন নামের একজন। তিনি বললেন, "বৃষ্টির মধ্যে সিএনজি পেলে ভালো হত। কিন্তু লকডাউনে তো সে উপায় নেই। জরুরি কাজে ফার্মগেইট যাব, রিকশা এতদূর যেতে চাচ্ছে না। এখন ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।”বিধিনিষেধ মানাতে সকালে বেগম রোকেয়া এভিনিউয়ে পুলিশের গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন পুলিশ বক্সে। মাঝে মধ্যে প্রাইভেট কার থামিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
কাকরাইল, শান্তিনগর, পল্টন ও ফকিরাপুলের রাস্তায় প্রচুর রিকশা থাকলেও অধিকাংশই খালি।
রিপন নামের এক রিকশাচালক বললেন, “আমার খোরাকিও লকডাউনে পড়ছে। ভোরে রিকশা নিয়ে বাইর হইলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। মালিকদের কী দেব আর নিজে কী খাব।”