এনবি নিউজ : করোনায় গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহীতে ১১, কুষ্টিয়ায় ১৪, ময়মনসিংহে ১৪ ও খুলনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।বিভিন্ন এলাকা থেকে এনবি নিউজ প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট।
ময়মনসিংহে ১৪ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় দুজন এবং উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মো. মহিউদ্দিন খান আজ বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. মো. মহিউদ্দিন খান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া রোগীরা হলেন ময়মনসিংহ সদরের নাজনিন (৫৮), টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার জেসমিন (৪৫)। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১২ জন হলেন, ময়মনসিংহ সদরের ইলমা (২৪), নাসরিন (৩৮), ঈশ্বরগঞ্জের আব্দুর রউফ (৫৫), রাবেয়া (৭৪), নেত্রকোনা সদরের আজিজুন্নেসা (৯২), পূর্বধলার আফাজুদ্দিন (৮৫), খালিয়াজুড়ির নূরজাহান (৭৫), জামালপুর সদরের রত্না (৩২), বকশীগঞ্জের আব্দুল মান্নাফ (৬০), টাঙ্গাইল সদরের রাজিয়া (৭০), মৃণাল (৬০) ও গাজীপুর সদরের আব্দুর রাজ্জাক (৭৫)।
ডা. মহিউদ্দিন আরও জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৪২৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছে ২২ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে জানা যায়, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর টেস্টে ৩৮৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে পাঁচ জন ও আরটি-পিসিআর টেস্টে ৮৫ জন শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৩ দমমিক ৪৩ শতাংশ।
এদিকে, জেলার সর্বশেষ করোনা টেস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ সদরের ৫৯ জন, নান্দাইলের আট জন, ঈশ্বরগঞ্জের ছয় জন, গৌরীপুরের এক জন, তারাকান্দার দুজন, হালুয়াঘাটের দুজন, ফুলবাড়িয়ার চার জন, ত্রিশালের তিন জন ও ভালুকার পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১২ হাজার ৩০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে ১২৫ জনের।
খুলনার ৮ জনের মৃত্যু
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানিয়েছেন, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে রেড জোনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁরা হলেন খুলনার সবুরুন্নেছা (৭২), বাগেরহাটের ঝর্ণা (৪৫), সাবিনা (৩৬), এনামুল হাসান (৪৭), পিরোজপুরের আয়শা বেগম (৬০) ও যশোরের রেখা রানি ঘোষ (৬৫)।
শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ জানান, হাসপাতালটির করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন খুলনার বাসিন্দা আফরোজা বেগম (৬০)।
এ ছাড়া খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় জালাল উদ্দিন (৬৬) নামের খুলনার এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, খুলনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ায় ১৪ জনের মৃত্যু
কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৩ জনের করোনা পজিটিভ এবং একজনের করোনার উপসর্গ ছিল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মেজবাউল আলম।
মেজবাউল আলম জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী এবং ৬০ জন উপসর্গ নিয়ে মোট ২২৮ জন ভর্তি রয়েছে।
পিসিআর ল্যাব ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
এদিকে, ১৪ দিনের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। মহাসড়কসহ শহরে ঢোকার সড়কগুলোতে পুলিশ বাঁশ দিয়ে রাস্তা সরু করে চেকপোস্ট বসালেও মানুষ সেখান দিয়ে বাধা ছাড়াই চলাচল করছে। আর কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানগুলো শুক্র, সোম ও বুধ—এই তিন দিন সকাল ৭টা থেকে দুপর ১টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রামেকে ১১ মৃত্যু, শনাক্ত বেড়ে দ্বিগুণ
দীর্ঘদিন পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। চলতি মাসের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম—১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাঁদের মৃত্যু হয়। তবে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাত জন এবং উপসর্গ নিয়ে চার জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ছয় জন, পাবনার দুজন, নাটোরের একজন, কুষ্টিয়ার একজন এবং নওগাঁর একজন।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৭ জন। আর, সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৩৭ জন। হাসপাতালের ৫১৩টি করোনা ডেডিকেটেড শয্যার বিপরীতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৪১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া ৫৭ জনের মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর ৩০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুজন, নাটোরের পাঁচ জন, নওগাঁর চার জন, পাবনার ১১ জন, সিরাজগঞ্জের দুজন, কুষ্টিয়ার একজন এবং চুয়াডাঙ্গার দুজন।
রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে যে ৪১৯ জন ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই রাজশাহীর। করোনা ও উপসর্গে রাজশাহীর ২০৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন এখানে। এ ছাড়া চিকিৎসা নিচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৩ জন, নাটোরের ৬৫ জন, নওগাঁর ৪৩ জন, পাবনার ৪৩ জন, কুষ্টিয়ার ১৬ জন, চুয়াডাঙ্গার নয় জন, জয়পুরহাটের দুজন, সিরাজগঞ্জের চার জন, মেহেরপুরের দুজন, ঝিনাইদহের চার জন এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একজন।
রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে চার জন এবং ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে মারা গেছেন ছয় জন। মৃতদের মধ্যে ছয় জন পুরুষ এবং পাঁচ জন নারী।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার জেলার ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৬৫ শতাংশ, আগের দিন যা ছিল ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।