এনবি নিউজ ডেস্ক : আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারের দখল নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান; দাবিটি সত্যি হলে তা সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর জন্য বড় ধরনের জয় বলে বিবেচিত হবে।
কান্দাহার একসময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল, তাদের জন্মও এখানে হয়েছে। আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য হাব হওয়ায় শহরটির কৌশলগত গুরুত্বও অনেক।
কান্দাহারের পাশাপাশি আগুয়ান তালেবানের হাতে বৃহস্পতিবার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহর ও প্রাদেশিক রাজধানীর পতনেরও খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গোষ্ঠীটি এখন দ্রুতগতিতে রাজধানী কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা কাবুলের মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে আনায় সাহায্য করতে সেখানে ৩ হাজারের মতো সৈন্য পাঠাচ্ছে।
বিশেষ ফ্লাইটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দূতাবাস কর্মীকে দেশে ফেরাতে এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাজ্যও দেশটির নাগরিকদের আফগানিস্তান ছাড়ায় সহায়তা করতে সেখানে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য প্রায় ৬০০ সেনা মোতায়েন করেছে।
টানা দুই দশকের সামরিক অভিযান শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের বাহিনী যখন আফগানিস্তান ছাড়ছে, তখনই তালেবান যোদ্ধার দ্রুতগতিতে একের পর এক এলাকার দখল নিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হেরাত, গজনি ও কালা-ই-নাওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একাধিক শহরের পতন হয়।
তালেবানের এক মুখপাত্র পরে ‘কান্দাহারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও আমাদের হাতে’ বলে দাবি করেন। হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহ-ও বাহিনীটির হাতে চলে গেছে বলে বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং দেশটির এক তৃতীয়াংশ প্রাদেশিক রাজধানী এখন শরিয়া আইন চাপিয়ে দিতে চাওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণে।
তারা এখন ‘বজ্রের গতিতে’ কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
“যে গতিতে তারা অগ্রসর হচ্ছে, তা এমনকি পাকা সামরিক বিশ্লেষকদেরও স্তম্ভিত করে দিচ্ছে,” বলেছেন বিবিসির এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।
কান্দাহার দখলের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা শহরের বিভিন্ন উপকণ্ঠ দখল করে বসেছিল। বুধবার তারা কান্দাহারের কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে পড়ে; বৃহস্পতিবার শহরটির কেন্দ্রস্থলে তাদের উপস্থিতির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে।
তালেবানের তাড়া খেয়ে সরকারি বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটির বাইরে একটি সামরিক স্থাপনায় আশ্রয় নিয়েছে বলে স্থানীয় এক বাসিন্দা ফ্রান্সভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন।
কাবুল-কান্দাহার মহাসড়কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শহর গজনিও বৃহস্পতিবার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণে যায়; এর ফলে রাজধানীর দক্ষিণ দিকে তালেবানরা শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসতে পারল।
তালেবান অনেক জায়গায় আত্মসমর্পণকারী আফগান সেনাদের হত্যা করছে- এমন খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাবুলের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
আফগানিস্তানে গত মাসে বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে সেখানে প্রতিবছর যে ৫০ কোটি ডলার সহায়তা পাঠানো হয় তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে জার্মান সরকার।
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করে ব্যর্থ হওয়া আফগানদের জোর করে দেশে ফেরত পাঠানোর নীতিও স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসও জার্মানিকে অনুসরণ করার ঘোষণা দিয়েছে।
তালেবানের নাটকীয় অগ্রগতি মোকাবেলায় সরকারের মিত্র ও তালেবানবিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।
বুধবার তিনি তালেবানবিরোধী শহর খ্যাত উত্তরের মাজার-ই-শরিফে উড়ে গিয়ে সরকারপন্থি বাহিনীগুলোকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন।
গনি উজবেক যুদ্ধবাজ নেতা আবদুল রশিদ দোস্তাম ও তাজিক নেতা আতা মোহাম্মদ নুরের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি সরকারপন্থি মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিতেও রাজি হয়েছেন।
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473