মার্কিন মডেলদের মতো সাহসী পোশাকে দেখা গেছে আরিয়ানাকে। নিজের দেশ আফগানিস্তানে খোলামেলা পোশাকেই ঘুরে বেড়াতেন তিনি। প্রকাশ্য মঞ্চ বা অনুষ্ঠানে গাইতেন গান। গত ২০ বছর দেশটির নারীরা যে স্বাধীনতাপ্রত্যাশী ছিলেন, সেই পথ দেখানো নারীদের অন্যতম আরিয়ানা সাইদ।
আরিয়ানা কাজ করতেন দেশটির দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য। ছিলেন একটি গানের অনুষ্ঠানে বিচারক। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ অঞ্চল তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় সেখানে আর বসবাস করার সাহস করেননি তিনি। রীতিমতো প্রাণ নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। মার্কিন সৈনিকদের বহন করা সেই সি–১৭ বিমানে লুকিয়ে উঠে ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন আরিয়ানা। সঙ্গে লিখেছেন, ‘এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, “হয়তো আমিই হব মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেষ যোদ্ধা।” মজার ঘটনা হচ্ছে, আজ সেটাই ঘটল আমার জীবনে।’ বিমানের সিটে বসে ঘুমন্ত আরিয়ানা কত বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতাও অনুসারীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
আরিয়ানার জন্ম আফগানিস্তানের কাবুলে। তবে জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে। তখন থেকেই পশ্চিমা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। আর লড়াকু মনটা যেন তিনি পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। তাঁর রক্তে মিশে আছে তাজিক গোষ্ঠীর স্পর্ধা, মা ছিলেন তাজিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। দশকের পর দশক ধরে তাজিকরাই তালেবানকে প্রতিরোধ করে আসছিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হিন্দুকুশ পর্বতের নিচে পঞ্জশির উপত্যকায় বসবাসকারী তাজিকদের দমাতে পারেনি তালেবান।
আট বছর বয়সে বাবা–মায়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পেশোয়ারে চলে যান আরিয়ানা। সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডে। গানের প্রতি ঝোঁক দেখে ১২ বছর বয়সে তাঁকে গানের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানে যাননি। সে বছর আফগানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আরিয়ানার গাওয়া ‘আফগান পেশারক’ গানটি। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মাতৃভূমিতে ফিরবেন। সেই থেকে আরিয়ানা আফগানিস্তানে থাকেন। তালেবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো দেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন ‘আফগানিস্তানের কণ্ঠ’। এই সাহসের জন্য ‘ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন তিনি।
গত রোববার আফগানিস্তানের কাবুল তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর কয়েক রাত লুকিয়ে ছিলেন আরিয়ানা। বুধবার মার্কিন বিমানে কাবুল ছাড়েন তিনি। কাবুল থেকে দোহা এবং সেখান থেকে আপাতত তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রয়েছেন তিনি।
নারী স্বাধীনতা এবং নারী অধিকার রক্ষায় নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন আরিয়ানা সাইদ। এ কারণে অনেকবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পিছু হটেননি তিনি। তাঁর অনুপ্রেরণায় অনেক নারীই সাহসের সঙ্গে জীবনে অগ্রসর হয়েছেন। তাঁদের অন্যতম আফগানিস্তানের নারী ফুটবলের জাতীয় দলের খেলোয়াড় নাদিয়া নাদিম। তিনি আরিয়ানার ভাইয়ের মেয়ে।
২০১৮ সালে নিজের ম্যানেজার হাসিব সাইদকে বিয়ে করেন আরিয়ানা। দেশ ছাড়ার সময় তিনিই আরিয়ানার সঙ্গে ছিলেন। ভাগ্যের জোরে আরিয়ানা দেশ ছাড়তে পারলেও আফগান বহু নারী জানেন না তাঁদের জীবনে কী অপেক্ষা করছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় জানা যায়, আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গভর্নর সালিমা মাজারির বাড়ি ঘিরে ফেলেছে তালেবান।