এনবি নিউজ : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসছেন ‘সরল বিশ্বাসের’ দ্বৈত ভোটাররা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী, একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বহাল রেখে অন্যটি লক করে দেওয়া হবে। তবে অসৎ উদ্দেশে কেউ দ্বৈত ভোটার হলে, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র অনুবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বুঝে না বুঝে অনেকে দ্বৈত ভোটার হন। ওই সময় ইসির ডাটাবেজের শনাক্তকরণ সিস্টেম শক্তিশালী না হওয়ার কারণে অনেকে দ্বৈত ভোটার হওয়ায় সুযোগ পেয়েছেন। তবে নাগরিকদের শনাক্তে আঙুলের ছাপের পাশাপাশি চোখের মনির ছবি নেওয়ার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর দ্বৈত ভোটার হওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি ইতোপূর্বে যারা দ্বৈত ভোটার হয়েছেন, তা ধরা পড়ে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, অনেকে না বুঝে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন। কেউ কেউ দ্বৈত ভোটার হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্ররোচনায়। কেউবা বয়স, নাম বা অন্যান্য তথ্য লুকাতে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে একাধিকবার নিবন্ধন করে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন। আবার কিছুক্ষেত্রে ইসির তথ্য সংগ্রহকারীদের অদক্ষতার কারণে দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অনেকে। এমনকি নিবন্ধন করে তার স্লিপ হারিয়ে ফেলে, বা অন্য কোনও কারণে এনআইডি না পেয়ে নতুন করে এনআইডি পেতে দ্বিতীয়বার ভোটার নিবন্ধন করেছেন অনেকে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, অনেকেই প্রথমবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না পেয়ে ভুল করে দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন। কারণ, তারা ভেবেছেন আগেরবার হয়তো তারা ভোটার হতে পারেননি। আবার অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতারণা করে দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন। তবে দ্বৈত ভোটারদের অনেকেই জানেন না যে, তাদের এনআইডি লক করা আছে। কোনও কাজ করতে গেলে তখন তারা বিষয়টি বুঝতে পারছেন। যেমন- বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না এসব নাগরিক। পরে সমস্যার সমাধানের জন্য কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
জানা গেছে, একাধিক স্থানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন, এমন ৫ লাখ ৩০ হাজারের মতো দ্বৈত ভোটার রয়েছে ইসির ডাটা-বেজে। বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বৈত ভোটারদের প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রটি (এনআইডি) রেখে অন্যগুলো লক করে রেখেছে ইসি। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রথম এনআইডিটি ব্যবহার না করে পাসপোর্ট, বিদেশে পড়াশুনা, চাকরি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ সকল কাজে দ্বিতীয়ট এনআইডি ব্যবহার করছেন। কিন্তু ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয়টি লক থাকায় তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। এমন বেশকিছু আবেদন ইসির কাছেও এসেছে। যার কারণে নাগরিকরা তাদের এনআইডি কোনটি রাখতে চান, সেটি জেনে তার চাহিদার ভিত্তিতে যৌক্তিকতা বিবেচনা করে, সেই এনআইডিটি চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।
দ্বৈত ভোটার নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী তার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে বলেন, ‘স্থায়ী ঠিকানা, নামধাম, বয়স একই রকম রেখে কেউ একাধিকবার ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হলে বোঝাই যায়, তিনি সরল বিশ্বাসে হয়েছেন। এক্ষেত্রে তার চাহিদা মতো একটি এনআইডি সচল রেখে, অন্যটি বন্ধ করে দেওয়া যেতেই পারে। তবে যদি কেউ বয়স, নাম, পিতার নাম ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিয়ে একাধিকবার ভোটার হয়ে থাকেন, তাহলে বুঝাই যায় যায়, এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, ‘অনেক সময় না বুঝেও অনেকে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন। আর দ্বিতীয়বারের এনআইডি দিয়ে তারা সব কাজ করেছেন। এখন দ্বিতীয় এনআইডিটি বন্ধ করে প্রথমটি রাখায় তাদের অনেকে বিপাকে পড়ছেন। এজন্য ভোটারের বক্তব্য শুনে যৌক্তিকতা বিবেচনা সিদ্ধান্ত দেওয়ার পক্ষে আমি মত দিয়েছি।’
দ্বৈত ভোটার সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নূরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘দ্বৈত ভোটারের বিষয়ে প্রথমটা রেখে দিয়ে অন্যটা লক করার সিদ্ধান্ত কমিশনের আগেই রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু নাগরিককের দ্বিতীয়টি বহাল রাখার আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ আমাদের দায়িত্ব নাগরিকদের সেবা দেওয়া। যেটা তাদের জন্য কার্যকরী হয় সেটাই আমাদের করা উচিত। এক্ষেত্রে সরল বিশ্বাসে কেউ একাধিকবার ভোটার হলে সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য গোপন করে, অথবা সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার ভোটার হলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দ্বৈত ভোটারদের ক্ষেত্রে ইসির আগের সিদ্ধান্ত এখনও বহাল রয়েছে। এখনও নতুন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি কোনও সিদ্ধান্ত হয় সেটা জানতে পারবেন।’
এ টি
প্রধান নির্বাহী - আরেফিন শাকিল, অফিসঃ নদী বাংলা টাওয়ার, শহীদ বুলু স্টেডিয়াম সংলগ্ন, মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী। ফোনঃ 01303-166473