জাপার নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলে ঐক্য স্থাপনের পরিবর্তে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরকে ঘিরে বিভক্তি আরও বাড়তে পারে। এর সুযোগ নিতে পারেন দলের নেতাদের একটি অংশ, যাঁরা দুজনের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে তৎপর রয়েছেন। মূলত দুজনকে ঘিরে থাকা গুটিকয় নেতা রওশন ও জি এম কাদেরের মধ্যে মিলমিশ চান না।
জাপার সূত্র জানায়, সম্প্রতি মহলবিশেষের ইন্ধনে ব্যাংকক থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে রওশন এরশাদ হঠাৎ জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। এর রেশ ধরে রওশনকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার সিদ্ধান্ত নেয় জাপার সংসদীয় দল। এ নিয়ে পরে দলে বিভক্তি প্রকাশ পায়। রওশনের পক্ষ নেন তাঁর রাজনৈতিক সচিবসহ কিছু বহিষ্কৃত এবং দলের সাবেক নেতা। তাঁদের সঙ্গে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ হাত মেলান বলে গুঞ্জন আছে।
জি এম কাদেরের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট রুল দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনে নিম্ন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা গতকাল চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম শুনানি নিয়ে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন। আদালতে জিয়াউল হকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। জি এম কাদেরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ এনবি নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ৫ ডিসেম্বর (আগামী সোমবার) পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ৫ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ সময়ে জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
জিয়াউল হক মৃধা গত ৪ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি মামলা করেন, যেখানে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চাওয়া হয়। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর আদালত গঠনতন্ত্রের আলোকে জি এম কাদেরকে জাপার কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জি এম কাদের উচ্চ আদালতে যান। হাইকোর্ট গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করেন। ফলে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনের পথ খোলে। হাইকোর্টের আদেশ গতকাল স্থগিত হলো।
জি এম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এনবি নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও জেলা জজের আদেশ অযৌক্তিক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং হাইকোর্টের আদেশ যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত বলে শুনানিতে বলেছি। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।’
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক গত রাতে এনবি নিউজকে বলেন, ‘বহিষ্কৃত হয়ে যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন আমরা তাঁদের ডেকে দলে আনব। এর কোনো সুযোগ নেই।’
দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, দৃশ্যত সম্মেলন আহ্বানকে কেন্দ্র করে জাপার বিভক্তি প্রকাশ পেলেও কার্যত এর মূলে রয়েছে জি এম কাদেরের সরকারবিরোধী ভূমিকা। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে সরকারের দুর্নীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের দুর্বলতা নিয়ে শক্তভাবে কথা বলছিলেন, যা সরকারের উচ্চপর্যায়ের মনঃপূত হচ্ছিল না। মূলত এ কারণেই রওশনকে দিয়ে সম্মেলন আহ্বান করানো হয়।
রাজনীতিবিষয়ক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, অনেক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে বশে রাখতে চেষ্টা করে। আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি আছে। হতে পারে জি এম কাদের আওয়ামী লীগের অতটা অনুগত নন। তাঁর কথাবার্তা ও আচরণে আওয়ামী লীগের সন্দেহ আছে।