এনবি নিউজ : শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ জোটে বাংলাদেশ সদস্য নয়। তবে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত সদস্য দেশগুলোর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নয়টি দেশকে ‘গেস্ট কান্ট্রি’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব দেশের প্রতিনিধিরা জি-২০ সম্মেলনের বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে যোগ দেবেন ওই সব দেশের শীর্ষ নেতা। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ‘গেস্ট কান্ট্রি’র মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যেতে পারেন। এতে করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনারও সুযোগ সৃষ্টি হবে। জি-২০ সম্মেলনের সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ।
ভারত ১ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে এক বছরের জন্য এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ভারত। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুবই উচ্চাশা পোষণ করেন। তিনি একতাবদ্ধতার প্রতি জোর দিয়েছেন। এ কারণে জি-২০ সামিটের স্লোগান করা হয়েছে, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ‘গেস্ট কান্ট্রি’ হিসাবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা বাংলাদেশের জন্য সম্মানের বিষয়। ঢাকা থেকে কর্মকর্তারা দিল্লি গিয়ে এবং দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা আমন্ত্রণ পেয়ে জি-২০ ফোরামের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। বর্তমানে কর্মকর্তাদের বৈঠক হচ্ছে। ভবিষ্যতে মন্ত্রী পর্যায়েও বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিভিন্ন সুপারিশ পেশ করবে। বছরজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে।
বাংলাদেশের তরফে জাতিসংঘে যে ধরনের বক্তব্য রাখা হয়; অনেকটা একই ধরনের বক্তব্য জি-২০ সম্মেলনে রাখা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি প্রতিরোধে সাড়া, অবকাঠামো উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সংকট প্রভৃতি বাংলাদেশের সামনে থাকা অগ্রাধিকার ইস্যুসমূহ তুলে ধরা হচ্ছে। আগামী সময়ে ২০০টি থেকে ২৫০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই সব বৈঠকেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। ফলে ওই অধিবেশনের আগে কিংবা পরে দিল্লিতে জি-২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ফলে এখনো জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ছিলেন। শ্রিংলাকে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার এবং পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শ্রিংলা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতকে বাংলাদেশের পক্ষে আনার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। এবার জি-২০ সামিটে বাংলাদেশকে ‘গেস্ট কান্ট্রি’ করায় শ্রিংলার ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
জানতে চাইলে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘জি-২০-এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ শুধু ভারতের জন্যই সুযোগ নয়; বরং সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এটা একটা বিরাট সুযোগ। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সুযোগ তো বটেই। ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা বাংলাদেশকে আজকের দিনের বড় ইস্যুগুলো, সেটা খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।’
বিশ্বের ১৯টি ধনী দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে জি-২০ গঠিত। সদস্য দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নয়টি গেস্ট কান্ট্রি হলো-বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডা : বহুপক্ষীয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে অবশ্যই বিভিন্ন সময়ে দুই দেশ যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছে সেসবের মূল্যায়ন তথা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। এই সুযোগে বাংলাদেশ ও ভারতের আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই নেতার একান্তে কথা বলাও অস্বাভাবিক নয়।
এ টি