এফডিসির একাধিক সূত্র জানায়, ইকবাল এক সময় ছিলেন নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাতের হকার। তার বাবা ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। নিরক্ষর বলা চলে ইকবালকে। সন্ত্রাস জগতে ঢুকে তিনি কিছু টাকার মালিক হন। এরপর সেই কালো পথ ধরেই চলচ্চিত্রর সাথে সম্পৃক্ত হন। শুরু থেকেই ইকবাল একের পর এক নানান অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। সিনিয়র কাউকেই তিনি সম্মান করেন না। নায়িকা বানানোর নাম করে বিভিন্ন নারীদের সাথে প্রতারনা (এসব ঘটনায় ফাঁদে পরে অবশ্য একাধিক বিয়েও করতে হয়েছে তাকে ), ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের এফডিসিতে নিয়ে এসে মহড়া দেওয়াই তার কাজ। এর আগে জাজ মাল্টি মিডিয়ার মালিক আজিজসহ বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিচালককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে । তার বিরুদ্ধে আছে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগও। রাজধানীর কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার কারনে অনেকেই তার বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলেন না। আবার, সুপারস্টার নায়ক সাকিব খানের বন্ধু হওয়ার কারনেও অনেকে ইকবালকে চাইলেও এড়িয়ে চলতে পারে না। এসব কারনেই ইকবাল এফডিসিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছিল। কিন্তু সেচ্ছাচাারিতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় এখন সবাই ইকবালের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। আর একারনেই ইকবাল এখন বেসামাল।
একজন চিত্র পরিচালক জানান, রোববার রাতে নাশতা নিয়ে ফিল্ম ক্লাবের এক কর্মচারীর সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা শুরু করেন প্রযোজক ইকবাল হোসেন জয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করাতেই তিনি নায়ক ওমর সানীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এমনতি তাকে হত্যারও চেষ্টা করেন। এত ওমর সানী প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষর নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গএখনো আতঙ্কে আছেন এই অভিনেতা। তিনি মনে করছেন, যেকোনো সময় তাঁর সঙ্গে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। তিনি শিগগির প্রযোজক ইকবালের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
রোববার রাতেই ওমর সানী গুলশান থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। এনবি নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান। তিনি এনবি নিউজকে বলেন, ‘গতকাল রাতে ওমর সানী থানায় এসে ডায়েরি করেছেন। জিডি নম্বর ১৪০৬। অভিযোগ করা হয়েছে, রাত ১০ টার দিকে ফিল্ম ক্লাব কার্যালয়ে ইকবাল হোসেন জয় (আজীবন সদস্য নম্বর-১৬৩) সামান্য নাশতাকে কেন্দ্র করে এক কর্মচারীর সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা শুরু করে। এতে বাধা দেওয়ার কারনে ইকবাল ক্লাবের সভাপতি ওমর সানীকে জীবন নাশের হুমকি দেদিয়েছেন।
ওমর সানী এই প্রতিবেদককে জানান, তখন রাত পৌনে ১০টা। একটি রুমে বসে ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ফিল্ম ক্লাবের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট ও কেবিনেটের সদস্যরা। এমন সময় প্রযোজক ইকবাল ঢুকে ক্লাবে খাবার না থাকায় ক্লাব নিয়ে নানা রকম বাজে কথা বলতে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ি, ক্লাবে রাত ৯টার পরে খাবার প্রস্তুত থাকে না। কেউ খেতে চাইলে তাঁকে অর্ডার দিয়ে খেতে হবে। তখন ইকবাল দুইটা ডিম চান। ক্লাবের কর্মচারী ডিম কিনে আনার জন্য ইকবালের কাছে টাকা চান। টাকা চাওয়ায় ইকবাল ছেলেটির ওপর রেগে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। গালিগালাজ করতে নিষেধ করায়, ইকবাল তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। ইকবাল এমনটাও বলেন, তিনি ক্লাব বন্ধ করে দেবেন।
ওমর সানী আরও বলেন, ‘সেই কর্মচারী ছেলেটিকে আমি তখনই বলি, ইকবাল এই ক্লাবেরই একজন সম্মানিত সাবেক সেক্রেটারি। তুমি তার কাছে সঙ্গে সঙ্গে টাকা চাইলে কেন? তখন ইকবাল আমাকে বলে, “এরা তোর ইশারায় চলে।” একপর্যায়ে সে আমার মাকে তুলে যা তা বলে গালিগালাজ শুরু করেন। তখন ক্লাবে থাকা সবাই উপস্থিত ছিলেন এবং তারাও ইকবালকে এধরনের আচরন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে ইকবাল ক্ষিপ্ত হয়ে তিনবার আমাকে কাটা চামচ ও ছুরি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন। তাকে সবাই ফিরিয়েছে, নইলে কালই আমি মার্ডার হয়ে যেতে পারতাম। আমি এখনো শঙ্কিত। সে যেকোনো মুহূর্তে আমার ক্ষতি করে দিতে পারেন। এই জন্য বাধ্য হয়ে আমি রাতেই জিডি করেছি।’ পরে রাত ১১টার সময় বিশেষ মিটিং ডেকে ফিল্ম ক্লাবের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আগামি ৬ মাসের জন্য ইকবালের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এটাকে স্থগিতও বলা চলে।
ফিল্ম ক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি ও প্রযোজক ইকবাল দাবি করেন, ”অনেক দিন ধরে ফিল্ম ক্লাবে নানান অনৈতিক কাজ হচ্ছিল। সদস্য ছাড়াও এই ক্লাবে বেশির ভাগই বাইরের লোকজন এসে আড্ডা দেয়। বহিরাগতদের জন্য জন্য আলাদা একটি রুমও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সবই চলছে ওমর সানীর ইশারায়। এগুলোর প্রতিবাদ করাতেই তাঁর বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে অভিযোগ। আমি নিজেই বলেছি আমাকে সাসপেন্ড করেন। আমি তাদের সঙ্গে থাকব না। এসব নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়েছে। থানায় জিডি করতে গিয়ে ওমর সানী মিথ্যা বলেছেন।’
তবে ওমর সানী জানান, ইকবালের নামে অভিযোগের শেষ নেই। আরও অভিযোগ থাকায়, ক্লাব থেকে কেন তাঁকে বহিষ্কার করা হবে না, সেই মর্মে চিঠি দেওয়া হয়। গত ১৭ তারিখে তাকে সাবধানতা অবলম্বন করে আরেকটি চিঠি দিলে তিনি ক্ষমা চেয়ে ক্লাব বরাবর চিঠি দেয়। তার সব অপরাধই আসলে ক্ষমার অযোগ্য।