নিউজ ডেস্ক : সংসদে যে দল থেকে মাত্র ৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছে সেই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে ইসরাইলে। জোট সরকারের গঠন নিয়ে নানা আলোচনার পর ইসরাইলের মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিড জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে। সেই চুক্তি অনুসারে আগামী দুই বছরের জন্য উগ্রপন্থী নেতা বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিড। এ খবর জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।
খবরে বলা হয়, ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে নামাতে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।
রোববার এই চুক্তির পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বেনেটের দল, যাদের ছয়টি আসন ইসরাইলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এখন জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে লাপিডের (৫৭) হাতে ছিল আর মাত্র দুই দিন। শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি। সম্ভাব্য এই চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরাইলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বেনেট (৪৯)।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তারা সবাই মিলেছেন। প্রত্যেকেই নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান চাইছেন। শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট ও অন্যান্য দলের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আর সাড়া মেলেনি।
৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার চলছে। বিরুদ্ধ জোটে গিয়ে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে রোববার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমর্থন নেন বেনেট।
গত মার্চে অনুষ্ঠিত ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচনে আসনের দিক দিয়ে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী দল লিকুদ পার্টির পরেই রয়েছে লাপিডের দল ইয়েস আতিদ। লাপিডকে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জের ধরে লাপিডের জোট শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ১২০ আসনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আসন পেয়েছে বেনেটের দল যা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট গঠনে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম।
ইসরায়েলের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার শর্ত থাকায় কোন একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন লাভ করা সম্ভব নয়। জোট সরকার গঠনের জন্য ছোট ছোট দলগুলোকেও দরকার হয়।
একনজরে উগ্রবাদী বেনেট
বিবিসির প্রতিবেদনে নাফতালিকে ‘উগ্র-জাতীয়তাবাদী’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আলজাজিরা তাকে পরিচয় করাতে গিয়ে ‘ডানপন্থি ধর্মীয় বক্তা’ উল্লেখ করেছে।
মার্কিন বংশোদ্ভূত বেনেট স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো। রায়ানা শহরে চার সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে তার বসবাস। মিলিয়নিয়ার এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ২০০৫ সালে নিজের স্টার্টআপ ১৪৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে রাজনীতিতে নামেন। পরের বছর নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ নির্বাচিত হন।
২০১০ সালে নেতানিয়াহুর অফিস ছেড়ে দখলকৃত পশ্চিমতীরে ইহুদি সেটেলারদের হয়ে লবিং করা ইয়েসা কাউন্সিলের প্রধান হন।
রাজনীতিতে ঝড় তোলেন ২০১২ সালে। ওই সময় তিনি কট্টর ডানপন্থি জিউস হোম পার্টির দায়িত্ব নেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন।
২০১৩ সালে ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ওদের মুক্তি না দিয়ে হত্যা করা উচিত।’
এ টি