এনবি নিউজ : সবশেষ শটটি নিজে নিতে চেয়েছিলেন মোহামেদ সালাহ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার প্রয়োজনই হলো না। টাইব্রেকারে অসাধারণ বীরত্বে ব্যবধান গড়ে দিলেন মিশরের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আবু গাবাল। ক্যামেরুনকে হারিয়ে আফ্রিকান নেশন্স কাপের ফাইনালে উঠল রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও গোলশূন্য থাকলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আবু গাবালের দারুণ নৈপুণ্যে ৩-১ ব্যবধানে জিতে ফাইনালে পা রাখে রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বুরকিনা ফাসোকে হারিয়ে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করছে সেনেগাল। সব ঠিক থাকলে আগামী রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পরস্পরের বিপক্ষে লড়বেন লিভারপুলের দুই সতীর্থ সালাহ ও সাদিও মানে।
টাইব্রেকারে প্রথম শটটিই কেবল বুঝতে পারেননি আবু গাবাল। ভিনসেন্ট আবুবাকারের শটে ডাইভ দেন উল্টো পাশে। কিন্তু ঠিক দিকেই ঝাঁপিয়ে হ্যারল্ড মুকুদি ও জেমস লিয়া সিলিকির শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। ক্ষীণ আশাটুকু বাঁচিয়ে রাখার কাজটা করতে পারেননি ক্লিন্টন এন’জিয়ি। আকাশে উড়িয়ে মারা তার শটের সঙ্গে ক্যামেরুনের ফাইনালের স্বপ্নও ভেস্তে যায়।
মিশরের তিন ফুটবলার জিজু, মোহামেদ আব্দেলমোনেম ও মোহামেদ লাশিন খুঁজে পান জালের দেখা।
চলতি আসরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার টাইব্রেকারে জিতল মিশর। শেষ ষোলোর ম্যাচে কোত দি ভোয়াকে ৫-৪ গোলে হারায় তারা। পরে কোয়ার্টার-ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে হারায় মরক্কোকে।আবার ‘ভাগ্য পরীক্ষায়’ জিতে খুশিতে ভেসেছে মিশর। মাঠে এসে উদযাপনে সঙ্গী হয়েছেন কার্লোস কিরোস ও ওয়ায়েল গোমা। কার্ডের খারায় তাদের কেউই ফাইনালে থাকতে পারবেন না ডাগআউটে।
টাইব্রেকারে একরকম অসহায় আত্মসমর্পন করলেও ঘরের মাঠে ১২০ মিনিট সমানে-সমান লড়াই করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন। প্রথমার্ধে বল দখল, গোলে শট ও সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে ছিল তারাই। মিশরের দুটি শটের একটিও ছিল না লক্ষ্যে।
আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে গড়া ম্যাচে অষ্টাদশ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ক্যামেরুন। কর্নার থেকে সবার ওপরে লাফিয়ে মাইকেল এনগাদেউ-এনগাদুইয়ের হেড পোস্ট ও বারের কোণায় লেগে ফেরে। ফিরতি বলে ভিনসেন্ট আবুবকরের শট একজনের গায়ে লেগে একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
টানা দ্বিতীয় কর্নারে আবার সুযোগ আসে ক্যামেরুনের সামনে। কর্নার থেকে ফ্লিকে বল ফাঁকায় পান মাইকেল। অরক্ষিত এই ডিফেন্ডার তাড়াহুড়ায় ঠিক মতো শটই নিতে পারেননি। অথচ পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পাওয়া এই খেলোয়াড়ের সামনে যথেষ্ট সময় ছিল।
ক্যামেরুনের একজনের দুর্বল ব্যাক পাসে সুবর্ণ সুযোগ এসে যায় সালাহর সামনে। কিন্তু সঠিক সময়ে অনেকটা বেরিয়ে এসে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা।
ম্যাচের শুরু থেকে বারবার রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানাচ্ছিলেন কিরোস। একবার হলুদ কার্ডও দেখেন তিনি। তাতেও শান্ত হননি। ৯০তম মিনিটে আবার কিছু একটা নিয়ে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে লাল কার্ড দেখেন মিশর কোচ। তাই ফাইনালে ডাগ আউটে থাকা হচ্ছে না তার।
ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে হলুদ কার্ড দেখেন মিশরের সহকারী কোচ গোমা। মরক্কোর বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচেও হলুদ কার্ড দেখেছিলেন মেজাজী এই কোচ। তাই মিশর ফাইনালে ডাগআউটে পাবে না তাকেও।অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই চাইছিল আগে রক্ষণ সামলাতে। এর মধ্যেই একশতম মিনিটে ডি-বক্সের মাথা থেকে সালাহর আড়াআড়ি শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ১১৭তম মিনিটে মিশরের রামাদান সোভির ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি গোল মুখে থাকা তিন সতীর্থের কেউ। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
প্রথম পছন্দেন গোলরক্ষকের চোটে সুযোগ পাওয়া আবু গাবাল নিজেও লড়াই করছেন চোটের সঙ্গে। সেটা নিয়েই টাইব্রেকারে ব্যবধান গড়ে দিয়ে নায়ক ৩৩ বছর বয়সী এই গোলরক্ষকই।