মাসুদ রানা : বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য নতুন সুযোগ খোঁজার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে লুক্সেমবুর্গ।
সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়, লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী জাভিয়ে বেটেল গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় এই আশ্বাস দেন।
প্রায় আধা ঘণ্টার আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় দুই নেতার। বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করতে নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে সম্মত হন তারা।
বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় লুক্সেমবুর্গকে ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
গতবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় লুক্সেমবুর্গের গ্র্যান্ড ডিউকের পাঠানো একটি অভিনন্দন বার্তার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুক্সেমবুর্গের সহযোগিতা চাইলে জাভিয়ে বেটেল এ বিষয়ে তার দেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে লুক্সেমবুর্গের সাহায্যপুষ্ট ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ভবনটি রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (আরআইবিএ) এর পুরস্কার পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন জাভিয়ে বেটেল।
বাংলাদেশের একজন স্থপতির নকশা করা ওই হাসপাতালের স্থাপত্যেরও প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিমান পরিষেবা চুক্তিটি শিগগিরই করতে সম্মত হন। লুক্সেমবুর্গ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই নেতাই তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় লুক্সেমবুর্গের দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং সেখান থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হওয়ার সুযোগ পেতে পারে কি না, সেই আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বেটেল আনন্দের সাথে বলেন, তার দেশে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে পড়ালেখা করছেন।
বাংলাদেশ যে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে, সে কথা জাভিয়ে বেটেলকে জানান শেখ হাসিনা। উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পণ্য যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি প্লাস এর মত বাণিজ্য সুবিধা পায়, সেজন্য লুক্সেমবুর্গ সরকারের সমর্থন চান তিনি।
জবাবে লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক সহায়তা দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হন।
দুই নেতার আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ও আসে। শেখ হাসিনা অবকাঠামো, পানি শোধন, নগর উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লুক্সেমবুর্গের জলবায়ু-স্মার্ট বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।
জাভিয়ে বেটেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সুবিধামত সময়ে লুক্সেমবুর্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান। শেখ হাসিনাও চলমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দেখার জন্য জাভিয়ে বেটেলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
আলোচনার শুরুতে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবং সর্বত্র বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় একে অপরকে অভিনন্দন জানান।
বাজেটে সহায়তা এবং টিকা অনুদানের মাধ্যমে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য ‘টিম ইউরোপ’কে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।