আসাদুজ্জামান তপন : রাজধানীর ফার্মগেইটসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে সিজনাল ‘গলা কাটা’ হোস্টেল ব্যবসা। এসব এলাকায় যেখানে ২০-২৫ হাজার টাকায় দুই-তিন কক্ষের এই মানের একটি বাসা ভাড়া পাওয়া যায়, সেখানে ছাত্রী হোস্টেলের নামে এই বাসার একটি কক্ষেই চার থেকে ছয়জনকে সিট ভাড়া দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। দেখভালের কেউ নেই এই গলাকাটা ব্যবসার।
সুমাইয়া মামুন। যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তার বাবা-মা নভেম্বরের শুরুতে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মেয়ের জন্য একটি হোস্টেলের খোঁজ করতে, যেখানে থেকে সে আগামী কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করতে পারবে।
দুর্ভাগ্যবশত, ফার্মগেইট এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলে ঘুরেও অতিরিক্ত ভাড়া আর ‘কঠিন সব শর্তে’র কারণে সুমাইয়ার জন্য কোনো সিট রিজার্ভ করতে পারেননি তারা।
সুমাইয়ার মা ঝর্না মামুন জানালেন, একটি রুম নয়, শুধু একটি সিটের জন্য তাদের কাছে ৮ থেকে ১৩ হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “জানুয়ারি থেকে সুমাইয়ার ঢাকায় থাকার পরিকল্পনা, অথচ তারা ডিসেম্বর মাসের ভাড়াও চাইছে। তার ওপর সার্ভিস চার্জ হিসেবে আরও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমি কেন এত টাকা দিয়ে এখানে থাকতে যাব? এই টাকা দিয়ে তো আমি পুরো একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে পারি।”
ঝর্না মামুন জানালেন, তার মেয়ে বর্তমানে উত্তরায় তার খালার সঙ্গে থাকছে। তারা ফার্মগেইট এলাকার কোনো হোস্টেল খুঁজছিলেন, যাতে উত্তরা থেকে প্রতিদিন ফার্মগেইট আসা-যাওয়ার ঝক্কি আর খরচটা এড়ানো যায়।
“কিন্তু আমরা এখন আর চাচ্ছি না মেয়ে কোনো হোস্টেলে থাকুক। বরং আমরা এই এলাকায় একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেব, যেখানে সে তার আরেক বন্ধুর সাথে থাকবে। ওদের সঙ্গে এই কয়েক মাসের জন্য আমার বোনও এসে থাকবে।”
গত ৬ নভেম্বর সারাদেশে শুরু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা চলবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ অবধি। এ বছর সারাদেশ থেকে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ামাত্র তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় পরীক্ষা। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি যুদ্ধ।
প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসে জড়ো হয়। তাদের একটি বড় অংশের গন্তব্য রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকা। কারণ, রাজধানীর অধিকাংশ কোচিং সেন্টারের প্রধান শাখা ওই এলাকাতেই।
বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা কোচিং সেন্টারগুলোর ফার্মগেট শাখায় এসে ভর্তি হয়ে গেলেও সমস্যা দেখা দেয় থাকার জায়গা নিয়ে। ঢাকার বাইরে থেকে কোচিং করতে আসা সবার তো আর আত্মীয়-স্বজনের বাসা ঢাকায় নেই। অগত্যা তিন থেকে চার মাসের খাওয়া-থাকার জন্য তাদের বেছে নিতে হয় কোচিং বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রাইভেট হোস্টেলগুলোকে।
ছেলে বা মেয়ে সবার জন্যই এটা সমস্যা, তবে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের জন্য পরিস্থিতি অনেক বেশি কঠিন। এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই অনেক বাবা-মা ফার্মগেইটে আসেন মেয়ের জন্য একটি নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করতে।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভর্তি কোচিং শুরু করাতে হবে, তাই ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে মেয়ের থাকার জায়গা ঠিক করতে অভিভাবকেরা ফার্মগেটের বিভিন্ন ছাত্রী নিবাসে যোগাযোগ শুরু করেছেন। আর এ সময়টাতেই হোস্টেলগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়।
ফার্মগেইট, রাজাবাজার, গ্রিনরোডে মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় দুই কক্ষের একটি চলনসই বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। আর ওই এলাকার ছাত্রী হোস্টেলগুলো একটি কক্ষে চার থেকে ছয়জনকে সিট ভাড়া দিয়ে আদায় করে নিচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। শিক্ষার্থীদের ভাষায়, যা ‘গলা কাটারই’ নামান্তর।
পুরানো ভাড়াটেরাও বিপদে
কয়েক মাসের জন্য ফার্মগেইট এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকার আর্থিক সামর্থ্য ও সুযোগ সুমাইয়ার পরিবারের থাকলেও অনেক পরিবারের তা নেই।
তাছাড়া, মা-বাবা ও অভিভাবকদের একটি বড় অংশ তাদের মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সদা উদ্বিগ্ন থাকেন। সে কারণে ভাড়া বাসার চেয়ে ছাত্রী হোস্টেলকে তারা নিরাপদ মনে করেন।
আর ঠিক এ কারণেই কোচিং মৌসুম ছাড়াও সারাবছ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা ফার্মগেইট এলাকার হোস্টেলগুলিতে সিট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
তাদের অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, অনেকে হোস্টেলে থেকে সরকারি-বেসরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেন, আবার অনেকে চাকরিও করেন।
প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম শুরু হলে হোস্টেল মালিকরা তাদের পুরানো সেসব বোর্ডারদের সিট ছেড়ে দিতে বলেন, যাতে দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকায় সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের সিট ভাড়া দেওয়া যায়।
ফার্মগেইটের পরিচিত একটি বেসরকারি হোস্টেল আপন আঙ্গিনা। তায়েবা সারা নামের এক শিক্ষার্থী সেখানে গত দেড় বছর ধরে আছেন চারজনের রুমের একটা সিট ভাড়া নিয়ে। কিন্তু হোস্টেল কর্তৃপক্ষ এখন তাদের বলছে, জানুয়ারির আগেই সিট ছেড়ে দিতে, নয়ত ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে।
আবাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন তায়েবা বলেন, “আমার রুমমেট আপুরা আজিমপুরের দিকে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেছে। কারণ সেখানে ভাড়া এখানকার চেয়ে কম। আর তারা তো যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় যেতে পারবে, কারণ তারা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। কিন্তু আমার পক্ষে তো সম্ভব না, কারণ আমার পরীক্ষা চলতেছে। প্লাস, কিছু দিন পরেই ভার্সিটি কোচিং শুরু হবে।”
তায়েবা জানান, তিনি এ হোস্টেলে ‘পার্মানেন্ট’ হিসেবে থাকেন। সেজন্য খাওয়া আর সিটের জন্য তাকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়।
“কিন্তু ওরা এখন আমার কাছে কোচিংয়ের মেয়েদের মত ভাড়া চাইতেছে। বলতেছে যে কোচিং এর তিন মাস সবার মত করে ১০ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। সাথে সার্ভিস চার্জ হিসেবে আরও ৮ হাজার টাকা দিতে বলতেছে।”
“হোস্টেল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতেছে কারণ তারা জানে যে আমি পরীক্ষার্থী এবং আমাকে এই এলাকাতেই থাকতে হবে। এখন আমি এখানে থাকতে পারব যদি আমি ১০ হাজার করে সিট ভাড়া দিই, কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার ফ্যামিলির ওপর প্রেশার পড়ে যাবে।”
আরেকজন শিক্ষার্থী জাহান স্বর্ণা। তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ‘মা হোস্টেল’ নামের আরেক ছাত্রী নিবাসে থাকছেন। তিনিও প্রায় একই কারণে ডিসেম্বরে হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বর্ণা জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তিনি এবং তার বোন এ হোস্টেলে থাকা শুরু করেন। তখন লকডাউনের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। হাতেগোণা কয়েকজন মেয়ে চাকরির কারণে এ হোস্টেলে ছিলেন সে সময়।
“তখন (মালিক) আমাদেরকে এক রুম ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দিতে রাজি হয়েছিলেন, খাবার ছাড়া। কিন্তু ওই বছর মাঝামাঝিতে সব খুলে দেওয়ার পর যখন ছাত্রীরা আসা শুরু করল, উনি আমাদেরকে খাবার বাবদ আরও তিন হাজার টাকা দিতে বললেন। আমরা রাজি হই, কারণ এটা ছাড়া উপায় ছিল না। যদিও আমরা হোস্টেলের খাবার খাই না।
“সেবার বলে-টলে থাকা গেলেও এ বছর উনারা আমাদেরকে রুম ছেড়ে দিতে বলছেন জানুয়ারীর আগে। যদি ছাড়তে না চাই, তাহলে কোচিংয়ের সময় চার-পাঁচ মাসের জন্য আরও দুইজন ছাত্রীর সঙ্গে আমাদেরকে রুম শেয়ার করতে হবে।”
স্বর্ণা বলেন, “মূল কারণ হচ্ছে, যদি আমরা এই রুমটা ছেড়ে দিই, তাহলে তারা এই রুমে মোট ৪টা বেড দিতে পারবে। প্রতি বেড থেকে ১০ হাজার করেও যদি আসে, তাহলে শুধু সিট ভাড়া থেকেই এ রুমে আয় ৪০ হাজার টাকা। তার ওপর সার্ভিস চার্জ আরও ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।”
অন্যায় নয়?
সাথী আক্তার ২০০৬ সালে ফার্মগেইট এলাকার একটি হোস্টেলে থাকতেন; তখন খাবার ও সিট ভাড়া বাবদ আড়াই হাজার টাকা দিতে হত।
প্রায় নয় বছর পর, সাদিয়া আফরিন নামের আরেক ছাত্রী বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে নিবেদিকা গার্লস হোস্টেলে একটি ছোট রুম ভাড়া নেন। তখন থাকা খাওয়ার জন্য তার মাসে পাঁচ হাজার টাকা গুণতে হত। ওই সময়ও তাকে সার্ভিস চার্জ দিতে হত, তার পরিমাণ ছিল দুই হাজার টাকা।
আর এখন ফার্মগেইট ও আশপাশের এলাকার হোস্টেলগুলোতে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জসহ প্রথম মাসে গুণতে হয় ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা। তারওপর অন্তত এক মাসের ভাড়া আগাম দিতে হয়।
আজিমপুর, বাড্ডা বা মিরপুর এলাকায় যারা এ ধরনের হোস্টেলে থাকেন, তারা এখনো মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকায় থাকতে পারছেন। কিন্তু ফার্মগেইট এলাকায় ওই ভাড়ায় সিট পাওয়া যেন কল্পনা।
ফার্মগেইটের মাদার হোমস, উত্তরবঙ্গ, নিবেদিকা, আপন আঙ্গিনা, সিনটেক্সসহ আরও কয়েকটি হোস্টেলের মুখপাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব হোস্টেলে কোচিংয়ের মৌসুমে সিট ভাড়া শুরুই হয় ৮৫০০ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ ভাড়া পৌঁছায় ১৩,০০০ টাকায়। হোস্টেলে ওঠার সময় প্রত্যেক সিটের জন্য সার্ভিস ফি হিসেবে গুণতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
নিবেদিকা গার্লস হোস্টেলের মুখপাত্র আমির হোসেন বললেন, তাদের হোস্টেলে সিট পেতে হলে ডিসেম্বর মাস থেকেই বুকিং দিতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে খাবার নেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
“অলরেডি যারা ভাড়া নিছে, তারা সবাই ডিসেম্বর থেকেই ভাড়া দিতেছে। হ্যাঁ, আমরা জানি যে ডিসেম্বরের আগে পরীক্ষা শেষ হবে না। স্টুডেন্টরা জানুয়ারির আগে থাকাও শুরু করতে পারবে না। কিন্তু তাদেরকে ডিসেম্বরের ভাড়া দিতে হবে কারণ এটাই আমাদের সিস্টেম।”
আর খাবারের বিষয়ে তার ভাষ্য, “খাবার নেওয়া লাগবেই। এটা একটা প্যাকেজ সিস্টেম।”
এ এলাকার প্রায় সব হোস্টেলেরই চিত্র এমন। এমন নয় যে তারা গোপনে এটা করছেন। এসব শর্ত দিয়ে বছরের পর বছর তারা হোস্টেলের ব্যবসা করে আসছেন। অনেকে হোস্টেলের বিজ্ঞাপনের জন্য ফেইসবুকও ব্যবহার করছেন। সমস্যা হল, এসব নজরদারি বা জবাবদিহিতার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
ঢাকার ফার্মগেইট এলাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ‘হাব’ হিসেবে পরিচিত হলেও বছরজুড়ে এ এলাকায় কতজন শিক্ষার্থী থাকেন কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার পর ঠিক কত শিক্ষার্থী এখানে আসেন, তা নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এলাকার কাউন্সিলর বা সংশ্লিষ্ট থানায় নেই। কোচিং সেন্টারগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারাও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে চায় না।
ফার্মগেইটের ইউনিভার্সিটি কোচিং সেন্টারের (ইউসিসি) একজন মুখপাত্র বললেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ের জন্য ফার্মগেইট এলাকায় আসেন, তাদের সংখ্যা ২০ হাজারের কম হবে না বলেই তার ধারণা।
আর তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বললেন, তার ধারণা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলে সারাবছর প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তবে তার মতে, হোস্টেল মালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘খুব বেশি ভাড়া নেন না’।
“মাঝে মাঝে কিছু মানুষ এই হোস্টেলের সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বলে, তবে বাস্তবতা হল, তারা (হোস্টেল মালিকেরা) জাস্ট তিন মাসের জন্য ব্যবসাটা করে। এটা তো আসলে মৌসুমি ব্যবসা। এইসব হোস্টেলে তিন মাস পরে কিন্তু শিক্ষার্থীরা থাকে না। তো, যখন হোস্টেলে কেউ থাকে না, পুরা খালি পড়ে থাকে, তখন কিন্তু এসব হোস্টেল ব্যবসায়ীরা মাসের পর মাস ফ্ল্যাট মালিকদেরকে ভাড়া দিয়ে যায়। তাই, আমার মতে এই ভাড়া যৌক্তিক।”
আইনের ফাঁক-ফোকড়
জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানালেন, এ বিষয়ে তারাও অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ এর অধীনে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
“আমাদের আইনে ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলা নেই। আমরা আইন সংশোধনের খসড়ায় এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি। সংশোধিত আইন পাস হলেই আমরা এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারব।”
ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মোহাম্মদ খান গোড়াতেই গলদ দেখতে পাচ্ছেন।
“আমাদের পরিকল্পনাতেই ভুল আছে। প্রথম কথা হল, একজন শিক্ষার্থীকে কেন এত বেশি টাকা দিয়ে থাকতে হবে? তাছাড়া বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব হল এটা মনিটর করা। বাস্তবে কেউ এই বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মৌসুমি ব্যবসা দেখভাল করে না। এটা একটা একচেটিয়া ব্যবসার মত বছরের পর বছর চলছে।”
আদিল বলেন, “আমার একটি বাড়ি আছে। কিন্তু বাড়ি থাকলেই আমি যা খুশি তা করতে পারি না। সেখানে কিছু গাইডলাইন ও মনিটরিং থাকাটা দরকার। ব্যাপারটা হল- আমাদের একটা আইন আছে, কিন্তু সেই আইনে কোনো ডিটেইল নাই।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের (ফার্মগেটের, মোস্তফা গলি ও তেজগাঁও কলেজ গলির হোস্টেলগুলো এ ওয়ার্ডেই) কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানকে হোস্টেল ভাড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে তাদের জন্য কোনো নির্দেশনা নেই।
“এই প্রথম আমি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম যে হোস্টেল মালিকেরা ছাত্রীদের কাছ থেকে দশ-বারো হাজার কইরা টাকা নিতেছে। আমরা জানতাম যে তারা হাইয়েস্ট তিন-চার হাজার কইরা নেয়। এই বিভিন্ন জায়গার পোস্টার-টোস্টারে ওইটাই লেখা থাকে।”
এই জনপ্রতিনিধি বললেন, “এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে, আমরা আসলে ছাত্রী হোস্টেলগুলা এড়ায়ে চলি, কারণ ওইখানে মানুষজন উলটাপালটা কথা বলে। এই পাশটা এড়ায়ে চলার কারণেই হয়ত হোস্টেল মালিকেরা এর সুযোগ নিতেছে।
“এখন ধরেন, আমরা যদি ওদেরকে জিজ্ঞেস করি, ওরা জীবনেও আমাদের কাছে স্বীকার করবে না। তবে এই বিষয়টা নিয়া কোনো মেয়ে যদি আমাদের কাছে এখন লিখিতভাবে অভিযোগ করে, তাইলে আমি ওই হোস্টেল পুরা বন্ধ কইরা দেব। সেই ক্ষমতা আমার আছে।”