সে কারণে ওয়াশিংটন ডিসির গণতন্ত্রের যে তাজ একসময় বিশ্বব্যাপী ছিল প্রশংসিত, তা-ই পরিণত হয়েছে পুলিশের রাজ্যে। নির্বিঘ্নে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চেয়েছে।
এবার ডিসিতে মোতায়েন করা হয় ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা, বন্ধ করা হয় বেশকিছু রাস্তা, উঁচু সব বেষ্টনী দিয়ে সুরক্ষিত করা হয় ক্যাপিটল ভবন, চলাফেরাতেও আরোপ করা হয় কড়াকড়ি।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একেবারে শেষ দিনগুলোতে এসে ওয়াশিংটনে যত সেনা সমাবেশ দেখা গেছে, তা আফগানিস্তান, ইরাক এমনকি সিরিয়ায় থাকা মোট মার্কিন সেনা সমাবেশের চেয়েও বেশি।
সহিংস বিক্ষোভের শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের সবগুলোতে এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় বিশেষ সতর্কতাও জারি হয়; আট রাজ্য থেকে পুলিশ ওয়াশিংটন ডিসির নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর হয়েছে; এ যেন বিদেশি কোনো শত্রুর হামলার মুখে আছে দেশ!
অথচ হুমকি বিরাজ করেছে দেশের ভেতর থেকেই, প্রেসিডেন্টের শপথ ঘিরে এমন পরিস্থিতি ইতিহাসে এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
আর এ পরিস্থিতিই জো বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার আগ মুহূর্তেও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে নানা বিপদের পট প্রস্তুত করেছে, যেগুলো মোকাবেলা করে চলার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগুতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া বাইডেনকে।
ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নীতি বদলে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাইডেনের কাজ শুরু হবে দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই।
বিভক্তি-বিদ্বেষ
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া নিয়ে অধিবেশন চলার সময় ট্রাম্প সমর্থকরা সেখানে যে তাণ্ডব চালায় তা ছিল নজিরবিহীন। বিশ্বকে হতবাক করে দেওয়া সেই ঘটনায় সংঘর্ষে এক পুলিশ এবং চার ট্রাম্পভক্তের প্রাণ যায়।
ওই হামলার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ যে সত্য বেরিয়ে এসেছে তা হল, প্রেসিডেন্টের ম্যানিয়া; ক্ষমতার লোভে তিনি কতটা উন্মাদ হয়ে উঠতে পারেন এবং কিভাবে উগ্র সমর্থকদের সহিংসতায় উসকানি দিতে পারেন বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে।
ক্যাপিটলের এ ঘটনাকে নজির ধরে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প খুব সফলভাবে আমেরিকানদের মধ্যে বিভক্তি ও বিদ্বেষের বীজ বপণ করে দিতে পেরেছেন। ওই বীজ থেকে চারাও গজাতে শুরু করেছে। বিষবৃক্ষ হওয়ার আগেই বাইডেনকে সেই চারা উপড়ে ফেলতে হবে।
নির্বাচনের পর শেষ বেলাতেও হার স্বীকার না করা ট্রাম্প তুলেছিলেন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ। তাই ট্রাম্পের বিদায়েও স্বস্তি মিলবে না। বাইডেন দেশের ভেতরেই এখন যে সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়বেন, তা স্পষ্ট।
বাইডেন নির্বাচনে অনেক ব্যবধানে ট্রাম্পকে হারালেও ট্রাম্পের ঝুলিতেও ভোট নেহাৎ কম নেই। অর্থাৎ, ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে আস্থা রাখা ভোটারের সংখ্যা খুব কম না। তাই ট্রাম্পের উপর আস্থা রাখা এই জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করে চলতে হবে বাইডেনকে।
তাছাড়া ক্যাপিটলে হামলার ঘটনাকে ঘিরে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার অভিসংশনের আরেকটি বাজে ইতিহাসের সাক্ষী এবার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রক্রিয়া কেবল শুরু হয়েছে, শেষ কোথায় তা এখনও জানা নেই। অনেকে এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিলেও বিরোধিতাও করছেন অনেকেই।
ট্রাম্পকে অভিশংসন দেশে বিভক্তি, অস্থিতিশীলতা আরও বাড়াবে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের এক সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাককার্থি। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সামনে এখন এটাও এক চ্যালেঞ্জ।
সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত দেশের হাল
জো বাইডেনের জন্য ট্রাম্প এমন এক দেশ রেখে গেছেন, যা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। ১৫০ বছরের ইতিহাসে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশকে এতটা খারাপ অবস্থায় রেখে যাননি।
জনগণের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি, রাজনৈতিক সহিংসতার পট প্রস্তুত করা, বর্ণবাদী কথাবার্তা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদে হাওয়া দেওয়া, দলীয় মেরুকরণ বাড়ানোই কেবল নয়, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাহাড়ও রেখে গেছেন তিনি।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আমলে বিশেষত শেষ সময়ের বিশৃঙ্খল দিনগুলোতে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চরম বিভক্তি এবং অগণতান্ত্রিক আচরণও দেখা গেছে। এসবই হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীর এই কঠিন সময়ের মধ্যেও।
মহামারীতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ রোগের সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয় তালিকাতেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক নম্বরে। মহামারী মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের যে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে ভারসাম্যহীনতা।
ট্রাম্পের অবজ্ঞার কারণে দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ আছে আগে থেকেই। তার উপর দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যখন আরও মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করে, তখন ট্রাম্প ছিলেন ‘ভোট কারচুপির’ প্রমাণহীন অভিযোগ এবং এ নিয়ে মামলা করায় ব্যস্ত।
দেশে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অবহেলায় এ কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতাও চোখে পড়ার মতো। ফলে টিকাদান কার্যক্রমও প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি। এ কর্মসূচিতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের ধারে কাছেও নেই দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নেওয়া বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ মহামারী।
বাইডেনের আশঙ্কা ছিল, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেরি হলে দেশের মহামারী পরিস্থিতি খারাপ হবে। তার সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্ধারের দায়ভার এখন বাইডেনের কাঁধেই চাপছে। কতটা সফলভাবে তিনি এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
দেশের এ অবস্থায় আমেরিকানদের ‘জাতি হিসেবে একজোট থাকার’ আহ্বান এরই মধ্যে জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, “আমি প্রায়ই একটি কথা বলি। তা হল, যদি আমরা একজোট থাকি, তবে আমাদের অসাধ্য কিছুই নেই। অতীতে কখনওই আমাদের একজোট হয়ে থাকা বর্তমান সময়ের মতো এতটা জরুরি হয়ে ওঠেনি।”
আরও বেশি বিপজ্জনক বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়া
ডনাল্ড ট্রাম্প ঘরে যে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, বাইরেও তেমনি। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও তা একই। অনেক অনিচ্ছা নিয়ে জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পাশাপাশি ট্রাম্প তার হাতে তুলে দিচ্ছেন চার বছর আগের তুলনায় আরও বেশি বিপজ্জনক এক বিশ্ব।
প্রথমেই বলা যায় ইরানের কথা। ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসে ট্রাম্প দেশটিকে আবার ঠেলে দিয়েছেন আগের সেই পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অবস্থানে। দেশটি এখন ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে লেগে পড়েছে। চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া শর্তের চেয়ে যা অনেক গুণ বেশি।
অথচ পরমাণু চুক্তির আওতায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিনিময়ে ইরান তাদের পারাণবিক কর্মসূচি ৯৮ শতাংশ কমিয়ে এনেছিল। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশে। আর এখন তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায়।
গত চার বছরে তেহরানের উপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, প্রভাবশালী ইরানি সামরিক কমান্ডার কাসেম সুলেমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার মতো একাধিক ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের পারদ চরমে থাকা ইরানের ফের পারমাণবিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠা বাইডেনের জন্য এক নতুন বিপদ।
এরপর আরও এক পারমাণবিক হুমকি উত্তর কোরিয়া। দেশটির নেতা কিম জং উন এরই মধ্যে বাইডেনের দিকেও তোপ দেগেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু ঘোষণা দিয়ে কিম বলেছেন, তারা অত্যাধুনিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি অব্যহত রাখবে।
ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলেও পরে সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে সে বৈঠকের কোনো সুফল বাস্তবে দেখা যায়নি।
দুই দেশ চির বৈরী সম্পর্ক থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসেনি। উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থামায়নি বা যুক্তরাষ্ট্র দেশটির উপর থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়নি।আর এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির পঞ্চবার্ষিক সম্মেলনে কিম যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের উন্নয়নেসবচেয়ে বড় এবং প্রধান শত্রু আখ্যা দিয়ে নতুন পররাষ্ট্রনীতির পথে হাঁটার কথা বলেছেন, যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বাগে আনা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে যেই ক্ষমতায় থাকুক, উত্তর কোরিয়া তাদের নীতি বদল করবে না বলেও সাফ জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে করা ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি বাড়িয়েছেন।
আইএনএফ চুক্তির আওতায় দুই দেশের স্বল্প ও মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় নতুন করে এর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার অস্ত্রের প্রতিযোগিতা আবার বাড়ার পট প্রস্তুত হয়েছে।
এছাড়া রাশিয়া ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত ‘ওপেন স্কাইজ ট্রিটি’ বা মুক্ত আকাশ চুক্তি থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরুরও ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তির আওতায় কোনো দেশের নজরদারি বিমান চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর আকাশে বিনা বাধায় উড়তে পারে। আইএনএফ এবং ওপেন স্কাইজ- দুটো চুক্তির সমাপ্তিই সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপদ বাড়াবে।
রাশিয়ার কাছ থেকে আরও যে বড় বিপদ নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে আছে তা হচ্ছে, বিভ্রন্তিকর তথ্যের প্রচার বা অপপ্রচার এবং সাইবার হামলার হুমকি। যে সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে অনেক তোলপাড় হয়েছে সেই ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠার পর থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংস্থা গতমাসেও বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। রাশিয়া থেকেই তা করা হয়েছে বলে ধারণা মার্কিন গোয়েন্দাদের। রাশিয়া এ ধরনের কর্মকাণ্ড এবং অপপ্রচার চালাতে খুবই সিদ্ধহস্ত।
ওদিকে ট্রাম্প আমলেও মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং বাস্তবতা নিয়ে সন্দেহ বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে। কোভিড-১৯ ফ্লুর চেয়েও কম মারাত্মক এমন দাবি করে ট্রাম্প দেশের স্বাস্থ্য সংকটকেই আরও বাড়িয়েছেন। ২০২০ সালের ‘নির্বাচন চুরি করা হয়েছে’ বলে ট্রাম্প যে মিথ্যা দাবি করেছেন, তাতে তার সমর্থকরা জয় ছিনিয়ে আনার জোশ নিয়ে ক্যাপিটল ভবনে হামলা করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে শত্রু দেশগুলো নিজ দেশে দমনপীড়নের নীতির যথার্থতা প্রমাণে ক্যাপিটলে হামলার এই ঘটনা লুফে নিয়েছে। বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিকতার আঙুল দেখানোকে এখন দ্বিমুখী নীতিই আখ্যা দিচ্ছে তারা।
ক্যাপিটলে অত বড় হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বন্দনা আর কিভাবে করা সম্ভব? এমন প্রশ্নও তুলেছে কোনো কোনো দেশ। এর আগে গত চার বছরে ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনার কারণে বিশ্বমোড়লের জায়গাও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।
ট্রাম্পের রেখে যাওয়া প্রবল বিভক্ত দেশ আর ভাঙাচোরা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে লণ্ডভণ্ড বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গাটাকে রাতারাতি আগের রূপে ফিরিয়ে আনা এবং ভাবমূর্তির ক্ষত নিরাময় বাইডেনের জন্য দুরূহ হবে বৈকি!
বাইডেন নিজেও গতমাসে এক বক্তব্যে স্বীকার করেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে আবার এমন এক বিশ্বের আস্থা ফিরে পেতে হবে, যে বিশ্ব আমাদের আশেপাশে থেকে কিংবা আমাদেরকে ছাড়াই কাজ করার পথ খুঁজতে শুরু করেছে।”
ট্রাম্প-কলঙ্ক প্রথম থেকেই মুছতে উদ্যোগ
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই ঘরে করোনাভাইরাস মহামারী, অর্থনৈতিক সঙ্কট, বর্ণবৈষম্য দূর করা এবং বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় জলবায়ু এবং অভিবাসনের মতো বিষয়ে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হচ্ছেন বাইডেন।
বাইডেনের হবু চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন এক মেমোতে জানিয়েছেন, অভিষেকের দিনেই ডজনখানেক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশ আসতে চলেছে।
এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা এবং ট্রাম্প যে সাত মুসলিম প্রধান দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ করেছিলেন, সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণাও।
রন ক্লেইন বলেন, “নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতির এক সঙ্কটজনক মুহূর্তে দায়িত্ব হাতে নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময়ই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, সব সমস্যা আমলে নিয়ে দেশকে আরও ভালোভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।”
এখন এ চেষ্টায় বাইডেন সফল হবেন নাকি আরও গভীর সংকটে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র তা-ই দেখার বিষয়।