ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, এনবি নিউজ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল শনিবারও নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির খবর এসেছে । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, চারজনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গতকাল শনিবার বিকালে সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় মাদ্রাসা ছাত্ররা পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ালে গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে শহরের কান্দিরপাড়া এলাকাতেও মাদ্রাসাছাত্রদের মধ্যে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নুরুস শামস জানান, বিকাল থেকে অন্তত ১৫ জনকে তার হাসপাতালে নেওয়া হয়, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
যারা মারা গেছেন, তাদের সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলেন বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই পাঁচজন হলেন- নন্দনপুরের হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২), বুধল গ্রামের আওয়াল মিয়ার ছেলে কাউসার মিয়া (২৫) এবং এক কিশোর।
তবে সংঘর্ষ ও হতাহতের বিষয়ে পুলিশ বা বিজিবি কর্মকর্তাদের কেউ কোনো কথা বলছেন না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “ওরা ঘেরাও করে ফেলেছিল, পুলিশ আর বিজিবি বাধ্য হয়েছে গুলি করতে। আমি চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি।”
পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে কারা সংঘাতে জড়িয়েছে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে কারা এরকম হামলা চালাতে পারে আপনারা বুঝে নেন।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা করলে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।
এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাপক তাণ্ডব চালায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। জেলা শহরের কাউতলি এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মার্কেট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় টানানো ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করে। বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে।
সেসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় সাড়ে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়।