ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরী মণির করা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তারকৃত নাসিরউদ্দিন মাহমুদকে ‘ভালো লোক’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য (এমপি) মুজিবুল হক চুন্নু।
আজ মঙ্গলবার সংসদে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে চুন্নু তাঁর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিরকে নিয়ে এই মন্তব্য করেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘গতকাল সংসদে একজন সদস্য নায়িকা পরী মণির জন্য বিচার চেয়েছেন। একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি তাঁকে চিনি। তিনি উত্তরা ক্লাবের তিনবারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেই লোকটি জাতীয় পার্টি করেন। তিনি ভালো লোক।
মিডিয়াকে অনুরোধ করব… অনেক সময় দেখা যায় মিডিয়ার প্রচারের কারণে অনেক সময় ভালো লোক দোষী হয়ে যায়। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী…’, এই পর্যায়ে চুন্নুর জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় তাঁর মাইক বন্ধ হয়ে যায়।
ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরী মণিকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে করা মামলায় গতকাল সোমবার ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করা নাসির পেশায় একজন উচ্চপর্যায়ের ঠিকাদার। সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য নাসির ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের সাবেক জেলা চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হল ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসির এক সময় ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগেও খেলেছেন।
গতকাল গ্রেপ্তারের পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি বুধবার (৯ জুন) রাতে যখন ক্লাব (ঢাকা বোট ক্লাব) থেকে বের হই, তখন পরী মণি ও তাঁর বন্ধু মদ্যপ অবস্থায় ক্লাবে প্রবেশ করেন। তাঁদের মধ্যে একটি ছেলে উশৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। ক্লাবে ঢোকার পর আমাদের বারের কাউন্টার থেকে বড় বড় ও দামি ড্রিংকসের বোতল জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি বাধা দিই। একপর্যায়ে আমি আমার নিরাপত্তাকর্মীদের ডাক দিলে তাঁরা পরী মণি ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে যান।’
গত রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেছিলেন পরী মণি। ঘটনার বিস্তারিত জানাতে রাত সাড়ে ১০টায় তাঁর বনানীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এই অভিনেত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে পরী মণি অভিযোগ করেন, চার দিন আগে আশুলিয়ার ঢাকা বোট ক্লাবে তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ অশোভন আচরণ করেছেন এবং শারীরিক নির্যাতন করেছেন। এ ঘটনায় তিনি বনানী থানায় মামলা করতে গেলেও কোনো সহযোগিতা পাননি।
২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় পরী মণির। ঢালিউডে বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। গেল বছরের ডিসেম্বরে পরী মণি বাংলাদেশের একমাত্র তারকা হিসেবে জনপ্রিয় মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের ‘এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকা’র তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন।