ইতোমধ্যে দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র দেড়শ কিলোমিটার দূরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর গজনিও তারা দখল করে নিয়েছে বৃহস্পতিবার।
দুই দশকের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে তাদের সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই তালেবানের এই অগ্রযাত্রা।
যুদ্ধের মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কয়েকশ মানুষ নিহত কিংবা আহত হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে।
যে পথ ধরে বিজয়ী বেশে তালেবানরা অগ্রসর হচ্ছে, সেই পথেই ফিরে আসছে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলের আতঙ্ক জাগানো স্মৃতি, তখনকার মতই বেশ কিছু নিষ্ঠুর নিয়ম তারা এরই মধ্যে ফিরিয়ে এনেছে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পাওয়া এলাকগুলোতে।
তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এসে সেখানকার সর্বশেষ অবস্থা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন বিবিসির সাংবাদিক সেকান্দার কেরমানি।
তার সঙ্গে যখন তালেবান যোদ্ধাদের দেখা হয়, তারা সে সময় আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর মাজার-ই-শরিফ থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছিল। যুদ্ধে পাওয়া ‘গনিমতের মাল’ তারা দেখাচ্ছিল, যার মধ্যে একটি হামভি, দুটি পিকআপ ভ্যান ছিল।
যুদ্ধে জেতা এই হামভি তালেবানের ‘গনিমতের মাল’।
ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হওয়া একদল যোদ্ধার মাঝে পাথরের মত কঠিন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক মাদ্রাসা ছাত্র আইনুদ্দিন। তিনি এখন একজন তালেবান কমান্ডার।বিবিসির প্রতিবেদক আইনুদ্দিনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, যে সাধারণ মানুষের জন্য তারা লড়াই করছেন বলে দাবি করেন, তাদের দুর্ভোগে ফেলে এই সহিংসতাকে তিনি কীভাবে যৌক্তিক মনে করেন।
ঠাণ্ডা স্বরে আইনুদ্দিন তাকে বলেন, “লড়াই চলছে, তাই মানুষ মারা যাচ্ছে।” তারা ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করছেন, যাতে বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি না হয়।
কিন্তু তালেবানরাই যে এ যুদ্ধের সূচনা করেছে, সে কথা তুলতেই আইনুদ্দিনের জবাব- “না, আমাদের নিজেদের একটা সরকার ছিল, যাকে উৎখাত করা হয়েছে। তারাই (আমেরিকানরা) এই যুদ্ধ শুরু করেছে।”
আইনুদ্দিনসহ বাকি তালেবানরা মনে করেন, পরিস্থিত এখন তাদের অনুকূলে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল। এখন আবারও তারা আধিপত্য ফিরে পাচ্ছেন।
কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘পুতুল’ সরকার ক্ষমতায় আছে মন্তব্য করে আইনুদ্দিন বলেন, “তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়ছে না … তাই তাদেরকে হত্যা করতে হবে।”
বিবিসির সাংবাদিক সেকান্দার কেরমানি লিখেছেন, “আমাদের কথোপকথন শেষ হওয়ামাত্র হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা গেল। হামভি নিয়ে তালেবান যোদ্ধারা মুহূর্তে উধাও হয়ে গেল। এ ঘটনা মনে করিয়ে দিলে আফগান বিমান বাহিনী এখনও তালেবানদের জন্য বড় বাধা, আর এ যুদ্ধ শিগগির শেষ হওয়ার নয়।”
কিছুদিন আগে প্রাচীন বাল্খ নগরীতে ঘুরে আসার কথাও লিখেছেন বিবিসির প্রতিবেদক। ধারণা করা হয়, ওই শহরেই জন্মেছিলেন ইসলামের খ্যাতনামা মরমী কবি জালাউদ্দিন রুমি।
সেকান্দার কেরমানি যখন বাল্খে গিয়েছিলেন, তখনও ওই এলাকা সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে চারপাশের গ্রামগুলো তালেবান যেদ্ধারা দখল করে নিয়েছিল।
এখন প্রায় ২০০ জেলা শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চারপাশে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সংহত করছে তালেবান। বাল্খও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।