৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের অভিশংসন ম্যানেজারদের পক্ষ থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দেওয়া হয়।
অভিশংসন ম্যানেজার দলের নেতা কংগ্রেসম্যান জ্যামি রাস্কিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ট্রাম্পকে শপথ নিয়ে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়।
অভিশংসন আদালত শুরুর আগে বা আদালত চলাকালে ৮ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ট্রাম্পকে উপস্থিত হয়ে তাঁর ব্যাখ্যা উপস্থাপনের জন্য চিঠিতে বলা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ট্রাম্প নিজে বা তাঁর আইনজীবীসহ উপস্থিত হয়ে ৬ জানুয়ারির ঘটনার ব্যাপারে জবানবন্দি দিতে পারবেন। আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, তাঁকে ক্রস এক্সামিন বা প্রশ্ন-উত্তর করে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
অভিশংসন আদালতে ট্রাম্প উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তা বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর বিপক্ষে যাবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
কংগ্রেস থেকে চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের আইনজীবীরা পাল্টা চিঠি দেন। ট্রাম্পের পক্ষে সংক্ষিপ্ত চিঠিতে বলা হয়, কংগ্রেসের চিঠি প্রমাণ করে, ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরের কোনো ভিত্তি নেই।
ট্রাম্পের আইনজীবী ব্রুস ক্যাস্টর ও ডেভিড স্কোহেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিশংসন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চালানো কোনো হালকা খেলা নয়। তিনি অভিশংসন আদালতে জবানবন্দি দিতে উপস্থিত হবেন না।
ট্রাম্পের প্রচার উপদেষ্টা জেসন মিলারও নিশ্চিত করে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ‘অসাংবিধানিক অভিশংসন’ কার্যক্রমে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ট্রাম্পের এই অস্বীকৃতির পর তাঁকে অভিশংসন আদালতে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হবে কি না, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
অভিশংসন আদালতে ট্রাম্পকে হাজির করতে তলব জারির বিষয়ে অভিশংসন ব্যবস্থাপক জ্যামি রাস্কিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু বলেননি।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন তলব জারি করা হবে কি না। ট্রাম্পের প্রথম দফা অভিশংসনের সময় এমন তলব দেওয়ার কথা আলোচনা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাঁর অভিশংসন আদালত তাঁর ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরও শুরু হচ্ছে।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, এখন এক রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পকে সিনেটে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা হবে না।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘আমরা অপেক্ষা করি। দেখি, বিচার কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে যায়। যদি অপরাধের জন্য দণ্ড কার্যকরই না করা যায়, তাহলে সংবিধানে থাকা এমন বিধান আমরা তুলে দিতে পারি।’
এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইনপ্রণেতাদের দ্রুততার সঙ্গে ট্রাম্পের অভিশংসন আদালতের কার্যক্রম শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত করণীয় বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাতে দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। কংগ্রেসে উভয় দলের মধ্যে সমঝোতা করেই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বাইডেন।
নির্বাহী আদেশ-নির্ভর প্রাথমিক সপ্তাহগুলো কাটিয়ে আইন প্রণয়নসহ কাজ এগিয়ে নেওয়ার তাড়না এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের।
গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে তাঁর পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের অধিকাংশ মাধ্যমে তিনি নিষিদ্ধ থাকায় তাঁর কথাবার্তা তেমন একটা জানা যাচ্ছে না। সাংবাদিকদের সঙ্গেও ট্রাম্পের কথা হচ্ছে না।
গত ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলেও তিনি এখন পর্যন্ত তাঁর পরাজয় স্বীকার করেননি। তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভিনন্দনও জানাননি।
২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের সর্বশেষ সাংবিধানিক কার্যক্রম নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা সেখানে হামলা চালান। তাঁদের হামলায় লন্ডভন্ড হয় ক্যাপিটল হিল। এই সহিংস ঘটনায় নিহত হন পাঁচজন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির ভুয়া দাবি তুলে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সেদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো করেছিলেন। নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে তিনি তাঁর সমর্থকদের উসকানি দেন। তাঁর উসকানিতেই উগ্র সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেন।
ক্যাপিটল হিলে হামলার এক সপ্তাহ পর প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের বিপক্ষে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন আইনপ্রণেতা এই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। আগামী সপ্তাহে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন আদালতের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
সিনেটের ১০০ জন সদস্য ট্রাম্পের অভিশংসন মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শপথ নিয়েছেন। ট্রাম্পের দণ্ড কার্যকর করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেট সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হবে।
সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক রিপাবলিকানের এগিয়ে আসার লক্ষণ নেই। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন। ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরে সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির ১৭ জন সদস্যের সমর্থন দরকার।
রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের পাশাপাশি ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন, একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসন দণ্ড আরোপের কোনো বিধান মার্কিন সংবিধানে নেই।
অবশ্য সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চার্লস শুমার বলেছেন, ১৮৭৬ সালে মার্কিন সংবিধানের এক ব্যাখ্যায় এমন দণ্ড কার্যকর করার সুযোগ রয়েছে।
ডেমোক্র্যাট দল চেষ্টা করছে, ন্যূনতম হলেও মার্কিন সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনী ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কার্যকর করা। তা করা সম্ভব হলে পরের কোনো নির্বাচনে ট্রাম্প প্রার্থী হতে পারবেন না।
মার্কিন সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনীতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতায় যুক্ত হলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় কোনো পদে দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে।
ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরও ট্রাম্প আমেরিকার রাজনীতির আলোচনায় টিকে আছেন। অভিশংসন আদালত শুরু হলে এই আলোচনা আরও সরগরম হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এটি/ ০৫ ফেব্রুয়ারি/২০২১