এনবি নিউজ : ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধরের ঘটনায় তারা এই হুমকি দিলেন।
আজ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। এসময় তারা তাদের দাবি মেনে নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই ২৫ নেত্রী কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী। গতকালের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিও মানেন না বলে এসময় তারা জানান।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি। তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর হামলায় জড়িতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম আমরা জানতে পেরেছি। তারা হলো, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা সিদ্দিকা মিম, আর্ণিকা তাবাসসুম স্বর্ণা, শিরিনা আক্তার, সোমা মল্লিক পপি, জিনাত হাসনাইন, লিমা ফেরদৌস, আশরাফ লুবনা, বিজলী আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঋতু আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার জ্যোতি ও ফারজানা ইয়াসমিন নীলা।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাতে মারধরের ঘণ্টাখানেক আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতাকর্মীরা জান্নাতুল ফেরদৌসের রুমে হামলা চালায়। এসময় তার রুমে থাকা ল্যাপটপসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। পরে হামলার সময় সহ-সভাপতি আয়েশা সিদ্দিকা মিম, রোকসানা জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার সঙ্গে থাকা ছোট বোনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সভাপতির হাতে তুলে দেয় তারা। গলা থেকে স্বর্ণের চেইন, ব্যাগে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ছোট বোনের হাতের আংটিও কেড়ে নেয় হামলাকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেত্রীরা বলেন, আজ গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে নিশি ও তিলোত্তমাকে। এর আগে যখন রিভার অডিও ফাঁস হয় সেটিরও তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল এই দুই জনকে। তারা সেই তদন্তের কোনও রিপোর্ট আমাদের জানায়নি। নিশি আর তিলোত্তমাকে নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আমরা মানবো না। বারবার অপরাধ করেও কেন্দ্র থেকে ইডেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এবার যদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে আমরা এখানে উপস্থিত ২৫ জন একসঙ্গে পদত্যাগ করবো।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সাতটি দাবি জানান তারা। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মার্জানা উর্মি দাবিগুলো পড়ে শোনান। দাবিগুলো হলো-
১. জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর হওয়া হামলার সাংগঠনিক জবাব দিতে হবে।
২. সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্তার সুষ্ঠু বিচার, ক্যাম্পাসের সব সিসিটিভি ফুটেজ লুকানোর চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
৩. অধ্যক্ষকে নিয়ে কটাক্ষের জবাব দিতে হবে।
৪. একচেটিয়া রাজনীতি ও চাঁদাবাজির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
৫. প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. প্রায় শতাধিক রুম দখলের হিসাব দিতে হবে।
৭. জান্নাতুল ফেরদৌসের যেসব ‘অশালীন’ ছবি তোলা হয়েছে তা সব নেতাকর্মীর সামনে ডিলিট করতে হবে এবং তার সব জিনিসপত্র ফেরত দিতে হবে।
এর আগে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কোন্দলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের অবস্থানে চলে পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগান। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা রাতে ইডেন কলেজের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে কলেজের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের সঙ্গে সহ-সভাপতিসহ আরেকটি গ্রুপের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
পরে জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, সিট বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর এবং আপত্তিকর ছবিও তুলে রাখা হয়।
এ টি