সাগর হোসেন : বেশ কদিন ধরেই ভোজ্যতেল ও চালের দামে ক্রেতারা নাকাল; এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে মুরগি। ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ২২০ টাকা, সোনালি বা কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা, সোনালি বা কক মুরগি কেজিতে ৮০ টাকা আর লেয়ার মুরগির দাম ৪০ টাকা করে বেড়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গতবছর এই সময়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। সেই হিসেবে দাম বেড়েছে ৩৬.৯৬ শতাংশ। আর এক মাস আগে দাম ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা, সেই হিসেবে এক মাসে দাম বেড়েছে ২১.১৫ শতাংশ।
মালিবাগের বাসিন্দা একজন বেসরকারি চাকুরে জানান, তিনি সাধারণত ফেরিওয়ালার কাছ থেকে মুরগি কেনেন। জানুয়ারির শেষ দিকে তিনি ১২টি সোনালি মুরগি কিনেছিলেন ১৮০০ টাকায়। এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি একই দামে মুরগি কিনতে পেরেছেন আটটি।
“মূলত ওই সময় থেকেই সোনালি মুরগি কম পাওয়া যাচ্ছিল। আমি যে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে নিয়মিত মুরগি কিনি, তিনি জানিয়েছেন পাইকারি বাজারেই দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় তারা মুরগি কিনতে পারছেন না।”
এমন অবস্থায় ওই ক্রেতা গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) চারটি লেয়ার মুরগি কিনেছেন ১৯০০ টাকায়। চারটি মুরগির ওজন হয়েছে সাড়ে চার কেজির মত।
“দামের এই অবস্থার কারণে মুরগি কেনা কমাতে বাধ্য হয়েছি,” বলেন তিনি।
মালিবাগ রেইলগেট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, যারা একসময় সোনালি মুরগি বিক্রি করতেন, তাদের অধিকাংশ খাঁচা শূন্য। কেউ কেউ খালি খাঁচায় লেয়ার মুরগি রেখে বিক্রি করছেন। দুই একজন বিক্রেতা ছোট আকৃতির সোনালি মুরগি বিক্রি করলেও দাম বেশ চড়া।
এ বাজারের বিক্রেতারা জানান, দুই মাস আগেও ওজন ভেদে সোনালি মুরগির কেজি ছিল ২২০ টাকার মধ্যে। সেটা এখন পাইকারি বাজারেই ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বলে জানালেন শামিম নামের একজন বিক্রেতা।
কেন বাড়ছে মুরগির দাম- এমন প্রশ্নে ঢাকার বড়বাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা শাহীন জানান, হঠাৎ সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে পাইকাররা দাম বাড়িয়েছে।
“মাঝে মধ্যেই বাজারে এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সরবরাহ বেড়ে গেলে দামও আগের অবস্থায় ফিরে আসে।”
বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির গণমাধ্যম উপদেষ্টা সাজ্জাদুর রহমানও বললেন, সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় পাইকারি বিক্রেতারা ‘সুযোগ নিচ্ছেন’।
“মহামারীর কারণে কিছু খামার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাচ্চা উৎপাদন কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সরবরাহ কমেছে। এই সুযোগে পাইকারি বিক্রেতারা ভালো লাভ করে নিচ্ছেন।”
তিনি জানান, আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও এখন ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
“কিন্তু সে কারণে খুচরায় দাম ১৬০ টাকা হতে পারে না। এক কেজি মুরগিতে খামারিরাও এত লাভ করতে পারে না, যেটা খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা এখন করছে।”
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এজি এগ্রো পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির মহাব্যবস্থাপক জাভেদ ভূঁইয়া এনবি নিউজকে বলেন, “গত এক বছরে মহামারীকালে খামারে মুরগির চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল। অনেক খামারি লম্বা সময় লোকসান দিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বাচ্চা উৎপাদনও কমে গেছে। তাতে বাজারে একটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে।”
নিজের খামারের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেখানে প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ বাচ্চা উৎপাদন করতাম, সেটা এক লাখে নামিয়ে আনতে হয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই দাম আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।”
কক বা সোনালি মুরগির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জাভেদ বলেন, “তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু কিছু এলাকায় সোনালী মুরগির মড়ক লেগেছিল। সে কারণে এখন এই মুরগির দামও বেড়েছে।”
খামার পর্যায়ে এখন ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বনিম্ন ১২৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ডাইরেক্টরির ইনফরমেশন অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ জাকারিয়া মনে করেন, মহামারীর কারণে পোল্ট্রি শিল্পে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তার একটা ধাক্কা হচ্ছে এই মূল্যবৃদ্ধি।
“বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকগুলো খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দাম আবার পড়ে যাবে।”