এনবি নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগ দিতে হেলসিঙ্কি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে আজ শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি চাটার্ড ফ্লাইট শুক্রবার সকাল নয়টা ২২ মিনিটে দিকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহন করে হেলসিঙ্কির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (এইচএসআইএ) ছেড়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সরকারি সফরের অংশ হিসেবে ১৯ থেকে নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন। নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা হেলসিঙ্কিতে দুদিনের যাত্রাবিরতি করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় (হেলসিঙ্কি সময়) হেলসিঙ্কি থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন এবং একইদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে সাধারণ বিতর্কে ভাষণ দেবেন।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলায় তাঁর ভাষণ দেবেন।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের একটি ছোট দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরে, তিনি একটি গাছ লাগাবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করবেন।
বিকেলে, প্রধানমন্ত্রী ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
২১ সেপ্টেম্বর, শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আয়োজিত ‘বিজনেস গোলটেবিল : ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।
২২ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী ডারবান ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ‘হোয়াইট হাউস বৈশ্বিক কোভিড-১৯ শীর্ষ সম্মেলন : মহামারির সমাপ্তি এবং আরও ভাল অবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সেদিন বিকেলে শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা সংকট : একটি টেকসই সমাধানের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সেখানে আগে-রেকর্ড করা বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২৩ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচি : সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক আহ্বান করা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দশক কর্মসূচির অংশ হিসেবে খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিজ মিয়া আমোর মোটলি কিউসি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুয়েন জুয়ান ফাইক।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন এবং নিউইয়র্কে অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি সফরের কথা রয়েছে।
এর আগে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) তাঁর ভাষণে সারা বিশ্বে কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণে সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু অধিক গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন।
ড. এ কে মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ওপর আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণে বৈষম্য দূর করার বিষয়টি অধিক গুরুত্বসহ আলোচনা করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়—‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার প্রত্যাশার মাধ্যমে সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা, পৃথিবীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া, জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো এবং জাতিসংঘকে পুনরায় শক্তিশালী করা’।
ড. মোমেন বলেন, এ বছরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আলোচনাকালে কোভিড পরিস্থিতি, টেকসই উপায়ে পরিস্থিতির অবসান ঘটানো এবং পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব পাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনে কোনো রকম বৈষম্য ছাড়াই কোভিড ভ্যাকসিনকে একটি গণপণ্য হিসাবে বিচেনার জন্য তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কোভিড ইস্যু নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ‘কপ২৬’ অনুষ্ঠানের আগে জাতিসংঘ অধিবেশনে জলবায়ু ইস্যু নিয়েও আলোচনা করা হবে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, ঢাকা বর্তমানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ার।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম রাখতে এবং অভিযোজন ও অভিবাসনের জন্য আরও অর্থায়ন চাই।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে পৃথক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার আয়োজন করবে। কয়েকটি দেশ এ আলোচনায় যোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এবং বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন।
ড. মোমেন আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি এই বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মার্কিন ব্যবসায়িদের প্রতি আহ্বান জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সফরকালে ভার্চুয়ালি একটি প্রেসব্রিফিং এবং কমিউনিটি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে তাঁর সরকারি সফর শেষে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আগে ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন।
গত বছরের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর। ফিনল্যান্ডে যাত্রা বিরতির পর আগামী ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।