প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ তার দেশের নেতৃত্বে দেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে দুই নেতা একান্ত বৈঠকও করেন। পরে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সার্বিক সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ কমিশন গঠনসহ চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করার প্রস্তাব দিলে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টও তাতে একমত হন।
“বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ যেন কার্যকর বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য অদূর ভবিষ্যতে পিটিএ স্বাক্ষরিত হবে,” বলেন প্রেস সচিব।
বাংলাদেশ বছরে গড়ে ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে মালদ্বীপে, আর আমদানি করে ৫ কোটি ডলারের পণ্য।
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দুই নেতাই সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে প্রেস সচিব জানান।
বিকালে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৗথ সংবাদ সম্মেলনেও পিটিএ নিয়ে কথা হয়।বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনো খুব বেশি আমরা অগ্রসর হইনি। এজন্য আমরা ওদের কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমরা প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করতে চাই, যেটা ভুটানের সাথে আমরা করলাম কিছুদিন আগে।
“ডাবল ট্যাক্সেশন যাতে না হয়, সেজন্য একটা প্রস্তাব আমরা দিয়েছি এবং কাস্টমসের উপর আমরা কাজ করছি। উভয় দেশ প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন অব ইনভেস্টমেন্টের উপরও আমরা কাজ করছি।”
বাংলাদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী, ওষুধসহ অন্যান্য পণ্য যাতে আরও বেশি করে মালদ্বীপে পাঠানো যায়, সে বিষয়েও দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ”ফিশারিজ, পর্যটনে মালদ্বীপের সঙ্গে কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায় এবং কানেকটিভিটি কীভাবে বাড়োনো যায়… এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে।”
দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করতে প্রতি বছর বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ বলেন, “আমরা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেছি। কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়ে যাতে ডাবল ট্যাক্সেশন এড়ানো যায়। এই সমঝোতা স্মারকগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়েও দুপক্ষ একমত হয়েছে।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে দুই নেতা নৌপরিবহন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মালে এবং বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেন।
এছাড়া যুব উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণেও একমত হন দুই দেশের সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘জয়েন্ট কমিশন ফর কম্প্রিহেনসিভ কোঅপারেশন’ গঠনে এমওএইউ স্বাক্ষর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ খলিল। ছবি: পিএমও
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।বাংলাদেশ মালদ্বীপের শান্তিরক্ষীদের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিংয়ে (বিআইপিএসওটি) প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করার আহ্বান জানায়।
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি সলিহ জানান, মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশি সবাইকে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেবে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা যে দুই দেশের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তার প্রশংসা করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট।
মালদ্বীপে চিকিৎসা কর্মীর ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় দুই নেতার মধ্যে।
জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় জাতিসংঘ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এক সাথে কাজ করার বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ মালদ্বীপের সম্ভাবনাময় বাণিজ্য অংশীদার। গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ সংগ্রহে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে মালদ্বীপ।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
অন্যদিকে মালদ্বীপের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী ফায়াজ ইসমাইল, বৈদেশিক সম্পর্ক সচিব সাবরা ইব্রাহিম নুরদীন, পরররাষ্ট্র সচিব আবদুল গফুর মোহাম্মদ।