এনবি নিউজ : আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যাবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কারণ দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারণকৃত ভাষণে তিনি একথা বলেন। সোমবার রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ বাংলাদেশ টেরিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার ওপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্য-শষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন- ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যাবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী সকলে মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন। আর যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেব।
কৃষক লীগের নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবাসব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে। আমি এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণী, তাদেরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা- এটা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কর্তব্য মনে করে।
তিনি বলেন, কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা যখন প্রথম সরকার গঠন করলাম। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল এবং এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল এবং যাদের গুলিতে সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হলো- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোনো কষ্ট করতে হয়নি। কারণ আমরা তাদের প্রতি যথাযথ ব্যাবস্থা নিয়েছি। বর্গাচাষীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষিব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি।
তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি। আমরা সেই সাথে সাথে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি, এবং আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেই সাথে সাথে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যাবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচকাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য যথাযথআমরা দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সমস্ত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাবস্থা আমরা নিয়েছি এবং আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও যেমন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাও সেধরনের সহযোগিতা পাবেন-তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ- মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সর্ব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষক লীগ নেতাকর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি কৃষকলীগকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই- করোনাভাইরাসের কারণে আমি নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সকলের সঙ্গে দেখাও আমার হলো না। প্রতি বছর আমরা কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা উদযাপন করি। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, গার্গল করা, ভাপ নেওয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দুরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশাগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সে নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন এবং এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেন- বাংলাদেশ এই মহা-দুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করতে পারেন। কী ধরনের সার ব্যাবহার করবেন, কতটুকু ব্যাবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যাবহার করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সব পরিমান যাতে পেতে পারে সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে তথ্য কেন্দ্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে হাতে আমরা তুলে দিয়েছি।
এ টি