এনবি নিউজ : চলতি মাসের শেষের দিক বা নভেম্বরের শুরুতে উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২০তম ব্যাচের ২৫০ কর্মকর্তাসহ কয়েকটি ব্যাচের প্রায় ৬০০ যোগ্য কর্মকর্তার তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্র্তৃপক্ষ ‘সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড’ (এসএসবি) ৩১ আগস্ট প্রথম বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করে। এরই মধ্যে কয়েকটি বৈঠক করার পর আজ (২৫ অক্টোবর) আবারও বৈঠকে বসছে এসএসবি। বেলা ২টায় অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকে ২৫০-এর বেশি কর্মকর্তাকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করা হতে পারে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম গতকাল বলেন, ‘পদোন্নতির বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। এসএসবির মিটিংসহ এ বিষয়ে কাজ চলছে। যারা পদোন্নতির যোগ্য তাদের বিষয়ে সুপারিশ করবে এসএসবি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে সুপারিশপ্রাপ্তদের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’ কতজনকে সুপারিশ করা হতে পারে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘এটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই চলছে। এ জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের পদোন্নতিতে উপ-সচিব পদমর্যাদার ৫৯৫ যোগ্য কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে বিসিএস ২০তম ব্যাচকে। এ ব্যাচে যোগ দিয়েছিলেন মোট ২৯৭ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ২৬৮ জনই উপ-সচিব হয়েছেন। এর মধ্যে যুগ্ম-সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২৪৮ জন। এর বাইরে অতীতে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি পাননি এমন কর্মকর্তার সংখ্যাও ১০০-এর কাছাকাছি রয়েছে। এবারের পদোন্নতিতে তাদেরও অনেককে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে সদ্য একীভূত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা রয়েছেন ৩৮ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ২০০ জন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিতে ইতিমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করেছে এসএসবি। সেখানে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, কিংবা সরকারবিরোধী দলের সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত-পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন তারা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। কারণ তারা মনে করছেন, তারা সরকারের গুডবুকে না থাকলে এমন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব পেতেন না। আবার অনেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্ব সামলে এসেছেন, অনেকে শ্রেষ্ঠ ডিসি বা শুদ্ধাচারের পুরস্কার পেয়েছেন। কেউবা ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে জনপ্রশাসন পদকও পেয়েছেন। তারাও মনে করছেন এবারের পদোন্নতিতে তাদের কপাল খুলবে। আবার যারা ব্যাচভিত্তিক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা কিংবা নেতাদের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, তারাও আছেন অনেকটা নির্ভার। তাদের মতে, ব্যাচের নেতা হওয়ার সুবাদে এসএসবি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের চেনেন এবং জানেন। তাদের সুনজরে রয়েছেন তারা। ফলে পদোন্নতির তালিকায় তাদের নাম অবশ্যই থাকবে। নানা সূত্র ধরে কোনো কোনো কর্মকর্তা আবার এসএসবির সদস্যদের সঙ্গেও গোপনে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন বলে জানা গেছে। অনেকে পদোন্নতি পেতে স্থানীয় এমপি কিংবা পছন্দের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে ডিও (আধা সরকারিপত্র) লেটার দিচ্ছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বরাবর। নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের প্রমাণ করতেই এ ধরনের কাজ করছেন পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা।
যোগ্যতা থাকলেও সবাই পদোন্নতি পাবেন না- এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক সংলাপে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রশাসনের পিরামিড ঠিক রাখতে আমাদের পদোন্নতির বিষয়ে সংকোচন নীতি নিতে হচ্ছে। যেখানে জনবল কাঠামোর আকৃতি পিরামিডের তো হওয়ার কথা, সেখানে মটকার মতো পেট মোটা হয়ে গেছে। আমরা তা পিরামিড আকৃতিতে যেতে চাই। তাই গত বছর থেকে পদোন্নতির সংখ্যা কমানো হয়েছে। হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে।’
এ টি