এনবি নিউজ : জাল সনদ দিয়ে মাতৃকালীন ছুটি নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানা স্থায়ী বহিষ্কার হয়েছেন। এ ছাড়া ছাড়পত্র না নিয়ে বিদেশে অবস্থানের অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জেসমিনকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রাবি ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে রোববার রাতে ৫১৪তম সিন্ডিকেট সভায় স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগেও জাল সনদ দিয়ে ছুটি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সালমা সুলতানার বিরুদ্ধে। ছুটি বাড়াতে দফায় দফায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। প্রথমে শিক্ষা ছুটি নিলেও ছুটি বাড়াতে মাতৃত্বকালীন জাল সনদ ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া তথ্য গোপনেরও অভিযোগ উঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০২০ সালের অক্টোবরে ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডেকেট সভায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম কবিরকে আহ্বায়ক করে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. রেজিনা লজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. সালমা সুলতানা গত ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত মোট দুই বছর ৬ মাস ৭ দিন (শিক্ষা ছুটি, স্যাবাটিক্যাল ছুটি ও অন্যান্য ধরনের) ছুটি ভোগ করেছেন। এর পর বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ১ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত ৩ দফায় প্রফেসর সালমাকে ২ বছর ১ দিন পূর্ণবেতনে শিক্ষা ছুটি দেওয়া হয়।
বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি সূত্র জানায়, বারবার ড. সালমা ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করলে ছুটির যথার্থতা ও গবেষণার অগ্রগতির বিষয় তার সুপারভাইজারের নিকট জানতে চাওয়া হয়। তখন তার জার্নাল পেপার সাবমিশনের প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে বলে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু গত ৫ মার্চ ২০১৯ এবং ৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে তার সুপারভাইজার জানায় ড. সালমার রিকমান্ডেশন লেটারটি তার লেখা নয়। এবং ২০১৮ সালেই ড. সালমার সঙ্গে তার সুপারভিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ড. সালমা কর্তৃক রিকমান্ডেশন লেটার দুটি ভুয়া দাবি করেন তিনি।
এদিকে ড. সালমার প্রসবজনিত সনদের বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিসিয়াল মেইল থেকে সনদটির ছবিসহ একটি মেইল করা হয় সনদে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার ডেল এর কাছে।
প্রতিউত্তরে ডাক্তার ডেল বলেন, এই স্বাক্ষর ও সনদটি আমার কিন্তু সালমা সুলতানা আমার কাছে কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেননি।
ছুটি নিয়ে জালিয়াতি করায় তার ছুটির জন্য সব সুপারিশ বন্ধ করে দেয় বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শিক্ষক সালমার আর কোনো শিক্ষা ছুটি পাওনা না থাকায় পদে বিভাগে যোগদানের জন্য গত ২০ মে ২০১৯ তারিখে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। পরে প্রাপক না থাকায় স্থায়ী ঠিকানা থেকে চিঠি ফেরত আসে আর অস্থায়ী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা থেকে ওই চিঠির জবাব দপ্তরে আসেনি।
আর তাই গত ২৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯২তম সিন্ডিকেট সভার ৬৩নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক পত্র ইস্যুর তারিখ হতে দুই মাসের মধ্যে পদে বিভাগের যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয় শিক্ষক সালমাকে। নির্ধারিত সময় ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের মধ্যে পদে যোগদানে ব্যর্থ হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অবসিত (টারমিনেট) হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সালমা সুলতানা শিক্ষা ছুটি নেন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, উনি লন্ডনে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের গ্রিনকার্ড বা নাগরিকত্ব পেয়েছেন যেটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পযর্ন্ত অবগত নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সদস্য জানান, ড. সালমার স্বামী লন্ডনে চাকরির সুবাদে অবস্থান করতেন। একসঙ্গে থাকার জন্যই মূলত এত কিছু অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, বিভাগের কাছে ড. সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছিল। পরে তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করেছে। সেখানে সত্যতা পাওয়ায় ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ড. সালমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট। মাতৃত্বকালীন সনদ জালিয়াতিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
এ বিষয়ে প্রফেসর সালমা সুলতানার মোবাইল নম্বরে ও টেলিফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিধিবহির্ভূতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও অনুমতি না নিয়েই ছুটিতে থাকা এবং ছাড়পত্র না নিয়ে বিদেশে অবস্থানের অভিযোগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জেসমিনকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিটের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারীকে চার বছরের জন্য পদোন্নতি স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
এ টি