এনবি নিউজ : যে কোনো ধরনের সহিংস, অরাজক, সংঘাত ও দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষ টিম। এর নাম হবে ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)। এজন্য ২০০ জন পুলিশ সদস্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ডিএমপির চারটি বিভাগ থেকে শারীরিক সক্ষমতা দেখে চৌকশ সদস্যদের এ টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। টিম সদস্যদের অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ডিএমপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকার পুলিশকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে চলতি বছরের এপ্রিলে সিআরটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রশিক্ষিত এই দলটিকে কেবল রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবহার করবে না ডিএমপি। বরং বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের মতো বড় কোনো ঘটনা ঘটলে এই টিম দ্রুত সাড়া দেবে। এতে একদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হবে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ মূলত ৫টি বিভাগ থেকে দাঙ্গা মোকাবিলা করে থাকে। এখানেই তাদের মূল ফোর্সের রিজার্ভ রয়েছে। এগুলো হলো-পিওএম (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) পূর্ব বিভাগ, পিওএম পশ্চিম বিভাগ, পিওএম উত্তর বিভাগ, পিওএম দক্ষিণ বিভাগ এবং ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স ডিভিশন। রাজধানীর রাজারবাগ ও মিরপুরে এদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
সিআরটির প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির জন্য পিওএম-এর চারটি বিভাগ থেকে ৫০ জন করে জনবল নেওয়া হবে। প্রতিটি দলে একজন করে পুলিশ পরিদর্শকসহ এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পর্যায়ের জনবল থাকবে। যেমন: পিওএম উত্তর বিভাগের দলে একজন পরিদর্শক, ৩ জন এসআই, ৩ জন এএসআই ও ৪৩ জন কনস্টেবল রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, টিমের সদস্যদের শারীরিক, মানসিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণের সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের শিফটে ভাগ করা হবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজন ও সংকটে সাড়া দিতে সার্বক্ষণিক একটি শিফট প্রস্তুত থাকবে।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘টিমের নাম হবে সিআরটি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানরা এর সমন্বয় করবেন।’
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলে (পিআরবি) মবিলাইজেশন কন্টিনজেন্টের কথা বলা আছে। সেখানে মোট ফোর্সের ১০-২০ শতাংশ যে কোনো জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখতে হয়। অনেক সময় এটি বাস্তবায়নে কিছুটা ঢিলামি দেখা যায়। আবার কখনো কখনো তোড়জোড় দেখা যায়। মূলত মবিলাইজেশন কন্টিনজেন্টকেই মডার্ন ফরমেটে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) অথবা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) হিসেবে নাম দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বঙ্গবাজারে আগুন লাগলে ডিএমপি কমিশনার সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারকি করেন। সেখানে ডিএমপির ৩০ প্লাটুন ফোর্স যায়। তাদের অনেকের মধ্যেই পেশাদারত্বের অভাব দেখা যায়। সেখানে পুলিশ সদস্যদের বড় একটি অংশের অস্ত্র নিয়ে উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা ওঠে। তখনই মূলত এ ধরনের ঘটনায় কী ধরনের ফোর্স যাওয়া উচিত, তা না নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সদস্যদের পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। যাদের প্রশিক্ষিত করে তুলে বিশেষ সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে এ কারণেই নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের ঘটনায় পুলিশ তুলনামূলক বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। পরে এসব ঘটনা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ টিম গঠনের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে। সর্বশেষ রোববার ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও সিআরটি গঠন নিয়ে কথা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রুখতে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) কার্যক্রম শুরু হয়। একই দিন তাদের হটলাইন সেবা চালু হয়। রাজধানীর তেজগাঁও থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে এই কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। নারীরা রাস্তায় বা অন্য কোথাও অনিরাপদ বোধ করলে বা বিপদে পড়লে এই টিমের হটলাইনে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক সাহায্য নিতে পারে।
এ টি