এনবি নিউজ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার বাংলাদেশে এসেছেন। এ সফরের অংশ হিসাবে আজ শনিবার সকালে প্রথমে তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রাম, পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও সব শেষে কাশিয়ানি উপজেলার ওড়াকান্দি সফর করবেন। এ সম্পর্কে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধির পাঠানো খবর :
সাতক্ষীরা : নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর গ্রামে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সাধারণ জনগণের যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। যশোরেশ্বরী দেবী মন্দিরসহ রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। মন্দির চত্বরে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। অবকাঠামোর গায়ে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্য ও উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরীপুর এলাকায় চারটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। সকালে ঈশ্বরীপুরের এ. সোবহান হাইস্কুল ময়দানে অবতরণের পর মোদি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ৯০০ মিটার দূরে মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছবেন। ঈশ্বরীপুর গ্রামের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে মোদি পূজা দেবেন।
১০ মিনিটের সফর শেষে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে যাবেন। মোদিকে স্বাগত জানাতে সাতক্ষীরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দীন।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি ঠাকুরবাড়ি যাবেন। সেখানে তিনি হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ মন্দিরে পূজা-অর্চনা শেষে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মোদি মতবিনিময় করবেন।
মোদির আগমনকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরিসহ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ঠাকুরবাড়িকে। মোদির সফর ঘিরে মতুয়াদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। ঠাকুরবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উলুধ্বনি, শঙ্খ ও কাঁসা বাজিয়ে মোদিকে বরণ করে নেবেন মতুয়া ভক্তরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি। মোদির নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঠাকুরবাড়ির চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চারস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। গোটা এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ঠাকুরবাড়ির চারপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, সফরকে ঘিরে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, মোদির সফর ঘিরে গোটা এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
কাশিয়ানী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, মোদির সফরকে ঘিরে জরুরি ভিত্তিতে চারটি হেলিপ্যাড ও হেলিপ্যাড থেকে ঠাকুরবাড়িতে যেতে সড়ক নির্মাণ, ঠাকুরবাড়ির অভিমুখী সংযোগ সড়কগুলো সংস্কার, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত আট কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক সংস্কার, তিলছড়া-রাহুথড় সড়ক থেকে ঠাকুরবাড়ি প্রবেশের জন্য ৬০০ মিটার পাকা সড়ক সংস্কার ও সৌন্দযবর্ধন করা হয়েছে।
এছাড়া ভিআইপি গেস্ট হাউজ, বিশ্রামাগার, পাবলিক টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস।
হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ ও কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত হিল্টু ঠাকুর বলেন, মোদিকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ঠাকুরবাড়ির পক্ষ থেকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, মোদি আমাদের ঠাকুরবাড়িতে আসছেন, এটা শুধু ঠাকুরবাড়ির গর্বের বিষয় নয়, সব মতুয়ার কাছে গর্বের বিষয়।
মতুয়া ভক্ত সাথী বিশ্বাস বলেন, ‘ঠাকুরবাড়ি মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। প্রতি বছর লাখ লাখ মতুয়া ভক্ত স্নানোৎসবে অংশ নিতে ঠাকুরবাড়ি আসেন। মোদির ঠাকুরবাড়ি আসার খবরে আমরা খুবই আনন্দিত।