সাগর হোসেন : আজ শনিবার তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। এই ধাপে সম্পূর্ণ ভোটই ব্যালট পেপারে হচ্ছে। প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে গোলযোগ-সংঘর্ষ হওয়ায় এবারের পৌর ভোটে বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান এনবি নিউজকে বলেন, “তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভায় ভোটের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী মালামাল ইতোমধ্যে সব কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। শনিবার সকালেই পৌঁছাবে ব্যালট পেপার।”তিনি জানান, প্রায় ১৯ লাখ ভোটারের এসব পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট হবে।
নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা থাকছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বরাবরের মতো ভোট নেওয়া হবে।
তৃতীয় ধাপে পরিস্থিতি ভালো রাখতে কমিশনের উদ্যোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এনবি নিউজকে জানান, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির শান্তিপর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অতিরিক্ত সংখ্যক নিয়োজিত রাখা হচ্ছে অনেক এলাকায়। বিজিবির প্লাটুন বাড়ানো হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে পৌর ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে। সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কমিশন বেশ সজাগ রয়েছে। যেমন চাহিদা ছিল সেই সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দেওয়া হয়েছে।”
ইতোমধ্যে দুই ধাপে ভোটে বেশ কয়েকটি এলাকায় সহিংসতা-গোলযোগের ঘটনা ঘটে। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও বিদ্রোহী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেক সময় সংঘাতের ঘটনা দেখা দেয়।
প্রথম ধাপে ইভিএমে এবং দ্বিতীয় ধাপে ইভিএম ও ব্যালট পেপারে ভোট হয়। তৃতীয় ধাপের সব পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট হবে।
ভোটের লড়াইয়ে ১০ দল
মেয়র পদে সব মিলিয়ে মোট ১০টি দলের প্রার্থী রয়েছে এই ধাপের ভোটে। তবে বরাবরের মতোই মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে।
পৌর ভোটের এই ধাপে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কনিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জাগপা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
যে ৬২ পৌরসভায় ভোট
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; নওগাঁর ধামইরহাট ও নওগাঁ সদর; সিলেটের
গোলাপগঞ্জ; বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও কাহালু;
রাজশাহীর মুন্ডুমালা; মৌলভীবাজার সদর; ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কোটচাঁদপুর; বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ; কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ; ফেনী সদর; মুন্সীগঞ্জ সদর; শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ; ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা; শেরপুরের নকলা; নাটোরের সিংড়া; রাজশাহীর কেশরহাট; চুয়াডাঙ্গার দর্শনা; ঝালকাঠির নলছিটি; নেত্রকোণার দুর্গাপুর; যশোরের মনিরামপুর; নোয়াখালীর হাতিয়া ও চৌমুহনী; লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া; টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, সখিপুর, মধুপুর ও মির্জাপুর; বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা; ভোলার বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান; শেরপুরের নালিতাবাড়ী; কুড়িগ্রামের উলিপুর; দিনাজপুরের হাকিমপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর; নড়াইল সদর ও কালিয়া; সাতক্ষীরার কলারোয়া; রাজবাড়ীর পাংশা; পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি; বরিশালের গৌরনদী ও মেহেন্দীগঞ্জ; জামালপুরের সরিষাবাড়ী; সিলেটের জকিগঞ্জ; নীলফামারীর জলঢাকা; পাবনা সদর এবং খুলনার পাইকগাছা।
এ ধাপে ৬৪ পৌরসভায় ভোটের তফসিল হলেও শনিবার ভোট হবে ৬২ পৌরসভায়। এক প্রার্থীর মৃত্যুর পর ত্রিশাল পৌর ভোট চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে।
আর কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় শনিবার ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
ভোট তথ্য
তৃতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৩৪৪ জন।
এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৬০ জন।
ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৩ হাজার।
মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৯৯টি, কেন্দ্র সংখ্যা ৮৫৪।
এ ধাপে মেয়র পদে তিনজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নয়জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কুমিল্লার লাকসাম ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
১৪ ডিসেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ৩ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১০ জানুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি ভোট।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার পাঁচ ধাপে এসব পৌরসভায় নির্বাচন করছে কমিশন।
প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় গত ২৮ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট হয়েছে। এরপর ১৬ জানুয়ারি ভোট হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায়।
তৃতীয় ধাপের ভোট ৩০ জানুয়ারি, চতুর্ধ ধাপের ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং পঞ্চম ধাপের ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
দুই ধাপের ফলাফল: দলীয় প্রতীকে এ ভোটে মেয়র পদে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুই জন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির ৪ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন, জাসদের ১ জন ও ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
প্রথম ধাপে ৬৫% এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬২% ভোট পড়েছে।
পৌর ভোটে গোলযোগ-অভিযোগ থাকলেও নির্বাচন কমিশন বলে আসছে, ভোটার উপস্থিতির মধ্যে দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভালো নির্বাচন হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষে ইসি সচিব বলেছিলেন, “দুয়েকটি জায়গায় দুষ্কৃতিকারীরা অপচেষ্টা করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এটা খুবই নগণ্য ঘটনা। সব মিলিয়ে এবার পৌরসভায় সুষ্ঠু ও একটা সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।
আর প্রথম ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, “সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।”
তবে দ্বিতীয় ধাপে সাভারে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।
“… এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। যে কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তা সিদ্ধ হয় না।”
সাহো/৩০ জানুয়ারি/২০২১