সাগর হোসেন : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির ‘কিংমেকার’ হতে চান। রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির এক সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আগামী ৯ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লোরিডায় এই সমাবেশ হওয়ার কথা।
২০ জানুয়ারি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি জনগণের উদ্দেশে কোনো বক্তব্য দেননি। বিদায় নেওয়ার সময় নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কোনো অভিনন্দন জানিয়ে যাননি। হোয়াইট হাউসের নতুন প্রশাসনকে নিয়েও তাঁর কাছ থেকে কোনো বক্তব্য জানার সুযোগ হয়নি আমেরিকার লোকজনের।
গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেভিন ম্যাককার্থি দেখা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনার কাজে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
২৯ জানুয়ারি রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন রনা ম্যাকডেনিয়েল বলেছেন, আগামী এপ্রিলে ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত দলের সভায় অন্যদের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমন সভায় রিপাবলিকান পার্টির মঞ্চে ট্রাম্পই যে মধ্যমণি হয়ে উঠবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের জন্য আবার নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রনা ম্যাকডেনিয়েল বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সহযোগিতা কামনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে চরম বিভক্তি রয়েছে। দলের উদার রক্ষণশীলরা ট্রাম্পের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা তাঁদের জন্য খুব অনুকূল নয়। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতীয়ভাবে ট্রাম্পের পরিচিতি এখন অন্য যেকোনো রিপাবলিকানের চেয়ে বেশি।
রিপাবলিকানদের মধ্যে ৮১ শতাংশ লোকজন ট্রাম্পের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন বলে সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ও রাজনীতিতে এখন চরম রক্ষণশীলতা আর চরম উদার নৈতিকতার লড়াই চলছে।
কংগ্রেসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তাঁর অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মার্কিন সিনেটে। কংগ্রেসে প্রস্তাব গ্রহণের সময় ১০ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সিনেটে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন রিপাবলিকানের অবস্থান ট্রাম্পের বিপক্ষে বলা দেখা গেছে।
টুইটার, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব সময় সক্রিয় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাঁকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। ফলে, ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে গলফ খেলেই সময় যাচ্ছে চার বছরের বেশি সময়ে সমস্ত আমেরিকাকে অস্থির করে রাখা ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
ক্ষমতা ছাড়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নিজেই নতুন দল করবেন, আলাদা রক্ষণশীল প্ল্যাটফর্ম করবেন—এসব কথা তাঁর লোকজন প্রচার করছেন। ট্রাম্প নিজে এসব নিয়ে কোনো সরাসরি কিছু বলেননি এখন পর্যন্ত। ওয়াশিংটন থেকে যাওয়ার সময় শুধু বলেছেন, দ্রুতই তিনি ফিরে আসছেন!
মার্কিন রাজনীতিতে অতি রক্ষণশীল ধারার প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এ অবস্থান থেকে নড়ানোর জন্য এখনো কোনো রিপাবলিকান নেতাকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। ২০২৪ সালে নিজে আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন, এমন প্রচার চাঙা রাখছেন ট্রাম্প। আমেরিকার রক্ষণশীল রাজনীতিতে ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠেছেন তিনি। স্থানীয় পর্যায়েও নির্বাচনে জয়ের জন্য ট্রাম্পের আশীর্বাদকে অপরিহার্য মনে করছেন অনেক রিপাবলিকান। অন্ধ সমর্থকেরা ট্রাম্পকে কেবল সমর্থনই করেন না, তাঁদের কাছে ট্রাম্প ঈশ্বরের সাক্ষাৎ প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন।
ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির চলমান সময়ের শীর্ষ এবং অসমান্তরাল নেতা হিসেবে নিজেকে ধরে রাখারই চেষ্টা করছেন। তাঁর পক্ষে বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। কোনো প্রার্থীর পক্ষে ট্রাম্পের সমর্থন আগের যেকোনো সময়ের সমর্থনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বের ও তাৎপর্যের বলে এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সাহো/৩০ জানুয়ারি ২০২১