এনবি নিউজ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়া ছয় জন এবং উপসর্গ নিয়ে নয় জনের মৃত্যু হয়। মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মো. মহিউদ্দিন খান আজ সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
করোনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ফিরোজা খাতুন (৮০), মুক্তাগাছার বিমল কান্তি (৬২), রাবেয়া খাতুন (৭৪), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার রোকেয়া খাতুন (৪৫), নেত্রকোনা সদরের দিদারুল ইসলাম (৭২) ও কলমাকান্দার আব্দুল করিম (১০১)।
এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সুমাইয়া (১৯), সদর উপজেলার ঝুনু বেগম (৬০), শেফালী (৩০), মোশাররফ (৫৫), গৌরীপুরের শেখ সাদী (৫৫), শেরপুরের গোপাল পাল (৩২), টাঙ্গাইলের রাবেয়া খাতুন (৭০), সুনামগঞ্জের আলেয়া খাতুন (৬৫) ও জামালপুরের মোহাম্মদ আলী (৫৫)।
করোনা ইউনিটের মুখপাত্র আরও জানান, মমেকের করোনা ইউনিটে ২৯৬ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছে ২০ জন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে আরও ২৬ জন।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় মোট ৭০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ১১২ জন এবং পিসিআর ল্যাব টেস্টে ৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন আরও জানান, মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জেলার ৫৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে ১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
বরিশাল বিভাগে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৪৩৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ হাজার ৭৩ জনে।
এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলায় আরও দুজন করে মোট ছয় জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানান, বরিশাল বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত হওয়া ১৯ হাজার ৭৩ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৫ হাজার ২৬৫ জন। এ ছাড়া বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ১৫৭ জন নিয়ে মোট আট হাজার ৩৫২ জন, পটুয়াখালী জেলায় নতুন ৪৩ জন নিয়ে মোট দুই হাজার ৫৮৩ জন, ভোলা জেলায় নতুন ১৬ জনসহ মোট দুই হাজার ১০৩ জন, পিরোজপুর জেলায় নতুন ৮৩ জন নিয়ে মোট দুই হাজার ৪৯৯ জন, বরগুনা জেলায় নতুন ৩৭ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত এক হাজার ৫২৯ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ১০০ জনসহ মোট শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার সাত জন।
এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরিশাল মেডিকেলের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে শুধু বরিশাল মেডিকেলেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১৬ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৫৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ৫৫৪ জনের মধ্যে ২২ জনের করোনা টেস্টের রিপোর্ট এখনও হাতে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল পরিচালকের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল মেডিকেলের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪৪ জন এবং করোনা ওয়ার্ডে পাঁচ জন ভর্তি হয়েছে। করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ২২০ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ৪৭ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৭৩ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল মেডিকেলে আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৮৮ জন করোনা পরীক্ষা করান। এর মধ্যে করোনা শনাক্তের হার ৫৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
খুলনায় করোনায় ও উপসর্গে ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের মৃত্যু
খুলনার চারটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়। বাকি পাঁচ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ জন ইয়েলো জোনে এবং পাঁচ জন রেড জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ইয়েলো জোনে সাধারণত করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ভর্তি হয়। এ ছাড়া রেড জোনে করোনা পজিটিভ হওয়া রোগীরা চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচ জন হলেন খুলনার আবদুর রউফ (৫৫), হাবিবুর রহমান (৮০), রাফেজা (৫৮), সুভাষ (৮২) ও যশোরের আবদুল জলিল (৬৬)।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন খুলনার আবদুল্লাহ (৭৭), মোশারেফ হোমন (৬৮), বাগেরহাটের সরদার মো. আলী (৭৭) ও পুস্পরানি বালা (৮১)।
খুলনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী রাশেদুল জানান, হাসপাতালটিতে করোনায় আরও দুজন মারা গেছেন। তাঁরা হলেন খুলনার হায়দার (৭৫) ও মমতাজ (৬০)।
অপরদিকে, গতকাল রোববার থেকে চালু হওয়া খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নড়াইলের ওহেদুজ্জামান নামের একজন মারা গেছেন।
কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে জায়গা নেই, করোনায় এক দিনে ১৭ মৃত্যু
কঠোর স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা জেলার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের করোনা পজিটিভ এবং তিন জনের করোনার উপসর্গ ছিল। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)ডা. তাপস কুমার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, পিসিআর ল্যাব ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৯২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ।
গত সাত দিনে কুষ্টিয়ায় এক হাজার ৪১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় ২৫৯ জনের মৃত্যু হলো।
কুষ্টিয়া করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সেবিকা ইনচার্জ (স্টাফ নার্স) দীপ্তি রানী জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে আছেন ২৬৯ জন রোগী। অর্ধেকের বেশি রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। মাত্র চারটি আইসিইউ শয্যা ও ১০ শয্যার সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে, চলমান সাত দিনের লকডাউনে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেও যত দিন যাচ্ছে তত বেশি মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলছেন তারা।
গতকাল রোববার দিনব্যপী অভিযান চালিয়ে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্যকারী ৮৬ জনের কাছ থেকে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় ও একজনের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেনা সদস্যদের টহল দিতেও দেখা গেছে।