বৃহস্পতিবার বিকেলে আগুন লাগার পর থেকে শান্তার মা শিমু দিগ্বিদিক ছুটছেন। আদরের মেয়ের খোঁজ চান তিনি। রাত দেড়টায় কারখানার ফটকে কথা হয় শিমুর সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল আটটায় কাজে আসার পর দুপুরে ছেলেকে দিয়ে শান্তার জন্য খাবার পাঠিয়েছিলেন। তারপর আর শান্তার কোনো খোঁজ পাননি।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত চারটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত ১৮ জন নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনের সঙ্গে এনবি নিউজের কথা হয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসব শ্রমিকের বেশির ভাগের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। ঘটনাস্থলে আসা স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন, শান্তা (১২), মুন্না (১৪), শাহানা (১৫), নাজমুল (১৫), রিপন (১৭), রাহিমা (৩৫), অমৃতা (১৯), তাকিয়া (১৪), হিমু (১৬), সুফিয়া (৩০), আমেনা (১৭), মাহমুদ (১৫), তাসলিমা (১৭), কম্পা (১৬), শেফালি (২০), ইসমাইল (১৮)। নিখোঁজ দুজন নাইম ও মোহাম্মদ আলীর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে কারখানার সামনে ভিড় করা শ্রমিক ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনেরা উদ্ধার কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁরা কারখানার সামনে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথেও ভাঙচুর চালান।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কারখানার সামনে পাওয়া এসব শ্রমিকের তালিকা ছাড়াও আরও অনেকেই নিখোঁজ আছেন বলে জানা গেছে। কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের পরপর ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয়।
টিপু সুলতান নামের এক ব্যক্তি এসেছেন হারিয়ে যাওয়া ভাই মোহাম্মদ আলীর খোঁজে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, বিকেল ৫টায় আগুন লাগার পর তাঁর মুঠোফোনে দুবার ফোন করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। জীবনের ভুলত্রুটির জন্য শেষবারের মতো ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। এরপর থেকে মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
টিপু বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমি তাঁকে বলেছিলাম জানলার কাচ ভেঙে পাইপ বেয়ে যেন নিচে নেমে আসতে। কিন্তু মানুষের চাপে সেটা সম্ভব হয়নি।’ বেঁচে ফিরে আসা ভাইয়ের সহকর্মী জানিয়েছেন, একসময় তাঁদের কয়েকজন সহকর্মী দোতলায় এসেছিলেন। কালো ধোঁয়ার কারণে নিচে নামা যায়নি। তখন থেকেই মোহাম্মদ আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সকাল ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনায় ৩২ জনকে উদ্ধার করে কর্ণগোপ ইউএসবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪) নামের দুই শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে মোরসালিন (২৮) নামের আরও এক শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মারা যান।
রাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল আরেফীন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে।
কারখানায় আটকা পড়া অন্তত ১২ জন শ্রমিককে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান।