এনবি নিউজ : বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলা, গুলি ও সংঘর্ষের পর অনেকটাই থমকে গিয়েছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে।
এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান শুরু হলে ভয়ে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু মাত্র একদিনের ব্যবধানে সেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে শনিবার মাঠে নামেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে এদিন প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা। প্রায় একশ পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের পৃথক সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গুলির প্রতিবাদ জানানো হয়।
এছাড়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া ঘটনার রাতের ৩ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজও প্রকাশের দাবি জানান ২৬ পৌর মেয়র।
সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো রকম গ্রেফতার বা হয়রানি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। এদিকে মেয়রের আহ্বানে? রাতেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজে ফিরেছেন।
১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলাকে কেন্দ্র করে আনসারদের গুলি ও পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আওয়ামী লীগের ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও মুনিবুর রহমানের করা দুই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। এছাড়াও আসামি রয়েছেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আরও ৬০১ নেতাকর্মী।
দুই মামলায় শনিবার পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশাল নগরীর ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্নাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম।
বর্তমানে নগরীতে যান চলাচল ও জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি টহল দিচ্ছে র্যাব। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, বরিশালের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এই মুহূর্তে বিজিবি নামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে যদি প্রয়োজন হয় এর জন্য বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ময়লা পরিষ্কার না করা হলে বরিশালের জনগণ দুর্ভোগে পড়বে। তাই পরিছন্নতাকর্মীদের তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
এছাড়া প্রশাসনের কাছে তিনি অনুরোধ করেন, তারা যেন পরিছন্নতাকর্মীসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের হয়রানি না করেন, এতে সাধারণ নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের যেসব কর্মচারী পুলিশের ভয়ে বাসায় যাচ্ছেন না, তাদেরও বাসায় ফিরতে অনুরোধ করেন। তাদের সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
ছাত্রলীগ ও মহিলা আ.লীগের বিক্ষোভ : দুপুরে প্রথমে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন।
এ সময় তিনি বলেন, হামলা বা গুলিবর্ষণের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনো কিছু তদন্ত ছাড়া সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত, রিয়াজ উদ্দিন, সৈয়দ জিসান আহমেদ ও রাজিন তাহমিদ বক্তব্য দেন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে নগরীর সোহেল চত্বরে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খালেদা হকের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি শ্যামলী সাহা, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিগার সুলতানা হনুফা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর গায়েত্রী সরকার পাখি, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শাহানাজ পারভীন মিতা, সংরক্ষিত কাউন্সিলর সালমা আক্তার শিলা প্রমুখ।
করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন : বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নগরীতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও অংশ নেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফয়সাল হাজবুন, রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার, পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক মাসুমসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
৩ ঘণ্টার ভিডিও প্রকাশের দাবি : ঘটনার দিনের ৩ ঘণ্টার পুরো ভিডিও জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন বরিশালের পৌর মেয়ররা।
সেই সঙ্গে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা প্রত্যাহার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বরিশালের ২৬ পৌর মেয়র।
শনিবার বিকালে বরিশাল ক্লাবে বিভাগের ২৬ পৌরসভার মেয়রদের পক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে ১২ জন পৌর মেয়রকে পাশে নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিছুর রহমান।
একই স্থানে ৪২ উপজেলার ৬৩ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে লিখিত বক্তব্য দেন গৌরনদী পৌর মেয়র সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী। তিনি বলেন, বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদ্যমান সুসম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।
কাজে ফিরেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা : সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আহ্বানে কাজে ফিরেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। টানা ৩ দিন কাজ বন্ধ রাখার পর শনিবার রাত ৮টা থেকে তারা কাজ শুরু করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান মেয়র আব্দুল্লাহ। রাত ৮টার পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজে নামার দৃশ্য দেখা গেছে।
বিবির পুকুরপাড় এলাকায় আবর্জনা পরিষ্কার করতে আসা পরিচ্ছন্নতাকর্মী জুয়েল বলেন, আমরা মেয়রের আহ্বানে কাজে নেমেছি। বিএম কলেজ রোডে কর্মরত বিপ্লব বলেন, নগরবাসী দুর্ভোগে রয়েছেন সেই কথা চিন্তা করে কাজে নেমেছি সবাই।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং গ্রেফতার আতঙ্কে বৃহস্পতিবার থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের কাজ বন্ধ রেখেছিলেন।
বাজার রোড এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লার দুর্গন্ধের কারণে একদিকে যেমন আমরা দোকানে বসতে পারছি না, তেমনি ক্রেতারাও বিপদে পড়েছেন।
বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দারা বলেন, কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ টি