গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ, প্রচার ও ভোট পর্যবেক্ষণে যুক্ত থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আওয়ামী লীগের এই মনোভাব জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। যিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, জায়েদা খাতুনের বিজয়কে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। সরকারবিরোধীরা একজোট হয়ে তাঁকে ভোট দিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের মাঠপর্যায়ে অনৈক্য ছিল। আওয়ামী লীগ এবং সরকারের ভেতর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি সহানুভূতিশীল গোষ্ঠী আছে। সে প্রভাবও তাঁর মায়ের জেতার ক্ষেত্রে কাজ করেছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী ভোটের জোর ও দলের অনৈক্য ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি—এসব বিবেচনায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করার তাগিদ ছিল। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশ্বাস ছিল, সুষ্ঠু ভোটেই দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান জয়ী হবেন। এ ছাড়া ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণের আগপর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও গাজীপুরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে চেষ্টা ছিল। কিন্তু এর কোনোটিই কাজে লাগেনি বলে কিছুটা চিন্তিত আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দলীয় প্রার্থী জয়ী হলে খুশি লাগত। কিন্তু ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ একজনকে বেছে নিয়েছেন। এতে কিছু করার নেই। তিনি বলেন, দলের ভেতর কোনো সমস্যা ছিল কি না, সেটা বিশ্লেষণ করা হবে। তবে বিএনপি-জামায়াত এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে এককাট্টা ছিল।
গাজীপুরের ভোটের ফল নিয়ে সরকারের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জায়েদা খাতুন আমাদেরই লোক; ফলে তাঁর জয় আওয়ামী লীগেরই—এমনটা অনেকে বলতে পারেন। সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দেওয়া গেছে, এটা বলেও অনেকে আত্মতৃপ্তি নিতে পারেন। কিন্তু মূল কথা অ-জনপ্রিয়তা ও দলীয় অনৈক্যে আওয়ামী লীগ হেরেছে; এটা মেনে না নিলে সামনে বিপদ আছে।’