মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম ‘প্রাইম-টাইম’ বক্তৃতা দেন। ক্ষমতায় আসার ৫০ দিনের মাথায় তিনি জাতির উদ্দেশে তাঁর প্রথম বক্তৃতা দিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারির এক বছর পূর্তির প্রেক্ষাপটে করোনা থেকে দেশকে মুক্ত করার বিষয়ে তিনি আশার কথা বলেন। বাইডেন বলেন, যদি মানুষ টিকা নেয়, তাহলে আগামী ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে আমেরিকা করোনা থেকে মুক্তি পেতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।
আসন্ন স্বাধীনতা দিবসে আমেরিকানদের সমাবেশ করার সুযোগ আসবে বলে মনে করেন বাইডেন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি প্রত্যেকের একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এখন বাইডেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে আগামী ১ মের মধ্যে টিকা নিশ্চিত করতে অঙ্গরাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সবাই টিকা নিলে ৪ জুলাই নাগাদ স্বাভাবিকতার একটি বৃহত্তর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর সে জন্য আমেরিকানদের সহায়তা দরকার।
আমেরিকা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, করোনাভাইরাসকে দূর না করা পর্যন্ত তিনি থামছেন না।
করোনার সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন বাইডেন। বেদনাভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, গত এক বছরে মহামারিতে সবাই কিছু না কিছু হারিয়েছেন। হারানোর বেদনা তিনি নিজ হৃদয়ে ধারণ করেন। এখন অন্ধকারে আলো খুঁজে পাওয়াই প্রত্যেক আমেরিকানের কাজ।
বিয়ে, জন্মদিন, গ্র্যাজুয়েশন উৎসবসহ নানা কিছু হারানোর এই কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজ প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা বলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সংকট মোকাবিলায় দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
করোনা মহামারির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সতর্ক না থাকি, যদি পরিস্থিতি বদলে যায়, আমাদের আবার নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় চলে যেতে হবে।’
এমন পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আকুল আবেদন জানান বাইডেন।
টেক্সাসসহ কিছু রক্ষণশীল অঙ্গরাজ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক পরার নির্দেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অথচ এখনো যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণে গড়ে ১ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই মহামারি মোকাবিলায় দেশবাসীর ঐক্য কামনা করেছেন। বিভেদ ভুলে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সবাই সতর্ক থাকলে, টিকা নিলে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একধরনের স্বাভাবিকতা চলে আসবে বলে আশার কথা উচ্চারণ করেন বাইডেন। আগামী ৪ জুলাই আমেরিকার জনগণ ছোট সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
টিকাদানে অঙ্গরাজ্যগুলোর সামর্থ্য বাড়ানোর প্রয়াসের কথা জানান বাইডেন। টিকা প্রদান করে দেশের মানুষ দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াবে—এমন কথা বারবার নিজের বক্তৃতায় বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন, টিকা নিরাপদ। তিনি নিজে, ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস টিকা গ্রহণ করেছেন। তিনি আমেরিকানদের টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ না করে বাইডেন বলেন, নানা বিষয়ে অবজ্ঞা-অবহেলা করতে তাঁরা দেখেছেন। জনগণকে সত্য জানানোর তাগিদের কথা উল্লেখ করেন তিনি। মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপে আস্থা রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বাইডেন।
জনগণের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আপনারা সত্য ছাড়া অন্য কিছু জানার দাবি রাখেন না। সত্য হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি তখনই স্বাভাবিক হবে, যখন ভাইরাসকে দমন করা সম্ভব হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে এখন গড়ে প্রতিদিন ২০ লাখের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত আমেরিকার প্রায় ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। এই গ্রীষ্মের মধ্যে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্যসেবীদের আশা।
বাইডেন বলেছেন, তিনি তাঁর ‘আমেরিকা পুনরুদ্ধার’ আইনের প্রণোদনা নিয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। দ্রুতই দেশের বিভিন্ন এলাকা সফরে তিনি বেরিয়ে পড়বেন বলে জানান।
করোনার কারণে আমেরিকায় এশিয়ানদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাইডেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চায়না ভাইরাস’ বলে আখ্যায়িত করতে পছন্দ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে চীন ও আশপাশের দেশগুলো থেকে আসা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ‘এশিয়ান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বছরের মার্চ থেকে আমেরিকায় এমন বহু এশীয় বিদ্বেষের কারণে হামলার শিকার হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
দেশের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য আনা, কর্মহীনদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাসহ আমেরিকার জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।